‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে তথ্য চুরি বলা হচ্ছে, এর চেয়ে দুঃখ আর নেই’

‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে তথ্য চুরি বলা হচ্ছে, এর চেয়ে দুঃখ আর নেই’

সাংবাদিকতা কেন চুরির অপরাধ হবে, এমন প্রশ্ন রেখেছেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একটি পবিত্র জায়গায় আমাদের সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে। তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দেশে সংবাদপত্রকে দেশের শত্রু বলা হচ্ছে, সাংবাদিকতাকে তথ্য চুরি বলা হচ্ছে, এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।

আনিসুল হক বলেন, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে মামলা তুলে নিতে পারে। আমরা জানি, আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দেবেন। অতীতেও ন্যায়বিচার পেয়েছি। আজও পেয়েছি। রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, সেটা নামঞ্জুর করা হয়েছে। পরশু আমরা আবার জামিন আবেদন করবো। এ মামলার কোনও মেরিট নেই। জামিন না হওয়ার কারণ নেই। সেই আস্থা আছে।

আনিসুল হক বলেন, ‘বলা হচ্ছে রোজিনা ইসলাম যে তথ্য নেবেন সেগুলি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। আজকে একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক বেশি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। উনি এই বক্তব্য নিয়ে গেলে প্রথম আলোর মতো একটি পত্রিকা যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করতে না। এটা কোন রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী, গণবিরোধী তৎপরতা না। সংবাদপত্র হচ্ছে চতুর্থ স্তম্ভ। আমরা বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, সংসদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।’

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মামলা করা হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা জামিনের জন্য আগে আবেদন করি। আমরা জামিনটা আগে পাই। এরপর মামলা যদি করতে হয়, তবে মামলা করা হবে। এটা আইনের ব্যাপার।’

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘কিন্তু আইনের বাইরে একজন নাগরিক হিসেবে, সাংবাদিক হিসেবে, একজন লেখক হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হিসেবে আমি বলতে চাই, স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে দেশের সব সাংবাদিককে এক হতে হবে। আপনারা আওয়াজ তুলুন, এই মামলা আজকেই প্রত্যাহার করা হোক।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সরকারের সহযোগী, আমরা প্রশাসনের সহযোগী। আমরা দুর্নীতির খবর তুলে না ধরলে সরকার কীভাবে জানবে দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। কাজেই আমরা সরকারের উপকার করার চেষ্টা করছি এবং রোজিনা ইসলাম তাঁর পেশাগত দায়িত্বপালন করে যাচ্ছিলেন।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বলছি না। আমি আনিসুল হক একজন লেখক হিসেবে বলছি, আমি বাংলাদেশের একজন ভোটার হিসেবে বলছি, আমি একজন করদাতা হিসেবে বলছি —সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। সেই অধিকার কায়েম করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা যদি জুলুমের শিকার হন, তবে তা সাংবাদিকতার জন্য ভালো না, দেশের জন্য ভালো না, সুশাসনের জন্য ভালো না, এটা প্রশাসনের জন্য ভালো না, এটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যায় না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বইগুলোয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবন্ধে লিখেছেন, আমাদের জাতির পিতা একজন সাংবাদিক ছিলেন। এই প্রবন্ধ পড়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল, মাথা উঁচু হয়েছে। সেখানে সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়েছে, তাঁকে (রোজিনা ইসলাম) আটকে রাখা হয়েছে। এটা হেনস্তা ছাড়া কিছুই না। কাজেই নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন