বাসে ঝুলছে মানুষ, দাপট দেখাচ্ছে সিএনজি-রিকশা-বাইক

কিছু না জেনেই রাজধানীতে সকালে যারা কাজে বের হয়েছেন, তাদের কাছে চির-চেনা শহরটা একেবারেই ভিন্ন রকম মনে হয়েছে। তারা শুধু দেখছে রাস্তায় গণপরিবহন খুব একটা নেই, যেই অল্প সংখ্যক চলছে তার প্রতিটিতে ‘বাদুর ঝোলা’ হয়ে আছে সাধারণ যাত্রীরা।

হেলপারদের নেই চিরচেনা হাঁকাডাক, স্টপেজগুলোতে থামছে না বাস। কারণ বাসগুলোই আগে থেকেই যাত্রীতে ঠাসা। অন্য দিকে গণপরিবহন সংকটে সুর বদলে দিয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। তারা বাড়তি ভাড়া ছাড়া কোনো গন্তব্যে যাবে না, একই অবস্থা রিকশা বা চুক্তিভিত্তিক মোটরবাইকগুলোর।

শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানী প্রতিটি এলাকার চিত্র একই রকমের। এর কারণ গতরাতে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আজ সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন তেমন বের হয়নি। ফলে গণপরিবহনের তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কাজে বের হওয়া মানুষদের।

রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। মূলত এই কারণে শনিবার সকাল থেকে রাজধানী জুড়েই গণপরিবহনের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে গুলশানে অফিস করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণপরিবহন সংকটের শিকার হয়েছিল। তিনি তার অফিসে আসার বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রথমে এক ঘণ্টার মতো বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাস পাচ্ছিলাম না, মাঝে মধ্যে দুই একটা বাস আসে কিন্তু সেগুলোতে আগে থেকেই যাত্রীতে ঠাসা থাকছে। প্রতিটি বাসের গেটেই ৬/৭ জন করে মানুষ বাদুর ঝোলা হয়ে থাকছে।

তিনি আরও বলেন, পরে সিএনজি নিয়ে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু প্রতিটিতে চালক অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে। সাধারণ ভাড়াতে তারা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাবে না। রিকশা দিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে যেতে চাইলাম তবুও পারলাম না, কারণ গণপরিবহন সংকটে তারাও অতিরিক্ত ভাড়া চায়। উপায় বলতে তখন দুই একটা ফাঁকা বাইক দেখা যাচ্ছে, যারা চুক্তিভিত্তিক বাইক চালায়। তারও এখন বেঁকে বসেছে, ২০০ টাকার ভাড়া ৩০০/৩৫০ টাকা ছাড়া যাবে না। সবাই সুযোগের ব্যবহার শুরু করেছে, কিন্তু অসহায় শুধু যাত্রীরা। পরে একটা সিএনজিতে ৩ জন মিলে শেয়ারে জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে মোট ৪৫০ টাকায় গুলশান আসলাম।

আব্দুল্লাহ আল মামুনের মতো একই রকমের অভিযোগ জানিয়েছেন অন্যান্য যাত্রীরাও।

যাত্রীদের এমন অভিযোগ বিষয়ে নিয়ে কথা হয় মহাখালীতে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসে তো যাত্রীরা যেতে পারছে না। এই অবস্থায় আমরাই তো যাত্রী পরিবহন করছি, তাই ভাড়া একটু বেশি নেওয়া স্বাভাবিক। আর সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটের কারণে বেশিরভাগ সিএনজি চালকরা ৩/৪ জন করে আলাদা যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। এতে করে এক সিএনজি চালক ২০০ টাকার ভাড়া ৩০০/৪০০ করে পাচ্ছে। সবাই আলাদা আলাদা ভাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে। আমিও উত্তরা থেকে ৩ জন যাত্রী নিয়ে মহাখালী এসেছি ১৫০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে। এতে সিএনজি চালকেরও লাভ, যাত্রীরও লাভ।

গুলশান ১ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় কথা হয় চুক্তিভিত্তিক বাইক চালক শমেন কুমার দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়তি তাই ভাড়টাও বেশি নিতে হচ্ছে। আগে যেখানে যাত্রী নিয়ে ২০০ টাকায় গেছি, এখন কমপক্ষে ৩০০ টাকার নিচে যাওয়া যাবে না। যারা চুক্তিভিত্তিক বাইক চালায় তারা সবাই আজ সকাল থেকে কিছুটা বেশি ভাড়া চেয়ে নিচ্ছে। যেহেতু আজ সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট তাই সকাল থেকেই আমারা প্রচুর যাত্রী পাচ্ছি। ভাড়া বেশি তবে বাইক থাকায় আজ যাত্রীদের খুব উপকার হচ্ছে।

অন্যদিকে আশেপাশে যাত্রী তুলছে না রিকশা চালকরা। একটু দূরের লোকজন ছাড়া যাত্রী তুলতে চাইছেন না রিকশাচালকরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দূরের ভাড়া বেশি, তাই পরিবহন সংকট থাকাকালীন কাছের যাত্রী না তুলে তার দূরের যাত্রী নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে রামপুরা ব্রিজের পাশে কথা হয় রিকশা চালক জাহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে সড়কে বাস নেই। দলে দলে যাত্রীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু বাস পাচ্ছে না। তাই সবাই রিকশাতেই যাচ্ছে। এ সুযোগে আমরাও দূররে যাত্রী নিচ্ছি, কারণ দূরে ভাড়া বেশি। আশেপাশে ২০/৩০ টাকার ভাড়া না নিয়ে দেখা যাচ্ছে পল্টন যাচ্ছি ২০০ টাকায়। এতে যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন