রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া কলেজ ছাত্রাবাস কোলাহলপূর্ন জাঁকজমকময় ছাত্রাবাসটি এখন মাদকের আখড়া

রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া কলেজ ছাত্রাবাস কোলাহলপূর্ন জাঁকজমকময় ছাত্রাবাসটি এখন মাদকের আখড়া

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

 

ঐতিহ্যবাহী মুড়াপাড়া কলেজের সুনাম ঢাকা শহরজুড়েই রয়েছে। এক সময় নারায়ণগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকা থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এখানে এসে লেখা পড়া করতেন। যাতায়াতের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় ছাত্রবাসেই থাকতেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে জাকজমকপূর্ণ থাকত ছাত্রাবাসটি।
কলেজের সংখ্যা বেড়েছে। জায়গায় জায়গায় অসংখ্য কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ণ না হওয়ায় এ কলেজের আগের জৌলুশ আর নেই। ছাত্র সংখ্যাও তেমন না। বাহির থেকে আর ছাত্র এখানে ভর্তি হয় না। পরিত্যাক্ত অবস্থায়ই পড়ে আছে এক সময়ের জাঁকজমকময় ছাত্রাবাসটি। ১২ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটি এখন মাদকের আখড়া। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদকদ্রব্যের খালি কৌটা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জমিদার বাড়ির অংশবিশেষ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর একটি ভবন মুড়াপাড়া কলেজের আবাসিক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে দেড় যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেই ভবনটি।
ঐতিহাসিক প্রাচীন এ স্থাপনাটি অযতœ, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই। জরাজীর্ণ ধ্বংসাবশেষ ভবনটি এখন বখাটে আর মাদকসেবীদের দখলে। রাত-দিন ভবনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৮৬ সালে তৎকালীন রামরতন ব্যানার্জী মুড়াপাড়ায় জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির পাশেই পাইক-পেয়াদের থাকার জন্য আলাদাভাবে ছয় কক্ষবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। জমিদাররা দেশ ছেড়ে চলে গেলে ১৯৬৬ সালে বাড়িটিতে মুড়াপাড়া কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার একমাত্র কলেজ ছিল এটি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জমিদারদের পাইক-পেয়াদের ভবনটি ছাত্রদের আবাসিক হল হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন। একসময় কলেজটিতে রূপগঞ্জসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে থেকে লেখাপড়া করতো। কিন্তু নানা জটিলতায় দেড় যুগ ধরে ছাত্রাবাসটি বন্ধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীন এ স্থাপনা ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় পড়ে আছে। খসে পড়ছে ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা। দেওয়ালজুড়ে বেয়ে উঠছে লতাপাতা। ভবনের দরজা-জানালা কিছুই নেই। সব কিছু খুলে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভবনের ইট-পাথরও। স্থাপনাটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের খালি কৌটা।
স্থানীয়রা জানান, দিনে বখাটেদের আনাগোনা আর রাতে চলে মদ-গাঁজা, ফেনসিডিলের আসরসহ নানা অপকর্ম। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। ইতিহাসের সাক্ষী স্থাপনাটি আবারো মেরামতের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্র আজমল হোসেন বলেন, ‘১৯৯৫-৯৬ সালে ভবনটি ছাত্রাবাস ছিল। দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এখানে থেকে মুড়াপাড়া কলেজে পড়াশোনা করতো। দিন দিন আশপাশে বিভিন্ন কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এতে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ছাত্রাবাসটি পুনরায় সংস্কার করা গেলে দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা থাকতে পারতো। পাশাপাশি মাদকসেবীদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া যেত।’
মঙ্গলখালি এলাকার বাসিন্দা নুরুমিয়া বলেন, ‘ছাত্রাবাসের পাশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেয়ারটেকারের চাকরির সুবাদে এখানেই থাকতে হয় আমাকে। দিন-রাত সমান তালে এ পরিত্যক্ত ভবনটিতে মাদকসেবীদের আনা-গোনা দেখা যায়। পরিত্যক্ত ও নির্জন হওয়াতে এখানে বখাটে আর মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।’
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জমিদার বাড়ির অংশবিশেষ এ স্থাপনাটি দীর্ঘদিন মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যাবহার হয়েছিল। কিন্তু সরকার থেকে লিজ নেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ছাত্রাবাসটি বন্ধ হয়ে যায়। আইনি জটিলতা শেষ হলেই ভবনটি সংস্কার করে পুনরায় ছাত্রাবাস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে মাদকের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন যেহেতু জানলাম বাড়িটির প্রতি আমাদের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। কোনো মাদকসেবী পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন