শিশুদের মুক্ত মনের শুদ্ধ চিত্তের অনুভূতি সৃষ্টি জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ

শিশুদের মুক্ত মনের শুদ্ধ চিত্তের অনুভূতি সৃষ্টি জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ

ময়মনসিংহ শহরের পৌর এলাকার কাঁচিঝুলি মেহগনি রোডে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া
মিশন গার্লস প্রাইমারি স্কুল। স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮৮ সালে।
স্কুলের নামটিতে গার্লস কথাটি যুক্ত থাকলেও এখানে ছেলেদেরকেও ভর্তি করা
হয়। বর্তমানে এই স্কুলে তিন শতাধিক ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা। করোনা ভাইরাসের
কারণে ৫৪৪ দিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার
কারণে উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে আসতে চাচ্ছেনা।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা উভয়েই এ নিয়ে বেশ দুচিন্তায় রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক মিসেস মুন্নি সরকারের টাইমস বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে জানান,
আমরা শুধু বই পড়ার মাধ্যমে নয় খেলাধুলা, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও
ছাত্র-ছাত্রীদের শখের বিষয়গুলো জেনে সেগুলোর উপর গুরুত্ব দিয়ে আনন্দ
দানের মধ্যদিয়ে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের চাপ প্রয়োগে নয়
বরং বিনোদনের মধ্যদিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার জন্য অনুপ্রাণিত
করছি।
প্রধান শিক্ষক মিসেস মুন্নি সরকারের সাথে আলোচনা কালে তিনি আরও জানান,
প্রতিটি শ্রেনি শিক্ষককের দায়িত্বে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি
পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বাগানের জন্য এক একটি প্লট ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
এতে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণি শিক্ষকের নেতৃত্বে সপ্তাহে একদিন বাগান
পরিচর্যার কাজ করে। শ্রেণি শিক্ষক বাগান পরিচর্যার সময় বিভিন্ন ফল, ফুল ও
ঔষধি গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে তাদের ধারণা
দেন। ছাত্র ছাত্রীরা এতে অনেক উৎসাহিত হয়ে অনেকে বাড়ীতেও বাগান করার
উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষকরাও  ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবার পরিদর্শন,
পড়াশুনার খোঁজখবর, বিনোদন ও শখের বাগান দেখতে এবং উৎসাহিত করার জন্য
নিয়মিত প্রত্যেকের বাড়ীতে যাচ্ছেন ও অভিভাবকদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, আমরা প্রথমে নিয়মিত স্কুলের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ ও
স্কুলের আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে প্রাধান্য দেই। অনেক সময়
তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে
স্কুলের আঙ্গিনা, শ্রেণিকক্ষ ও বাগানে কাজ করি। আমাদের নতুন বিল্ডিং এর
ছাদেও বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ে হাত মুখ ধোয়ার জন্য
সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমরা
বিদ্যালয়ে পাঠ দান করছি।
প্রথম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক মিসেস হাসিনা আক্তার বলেন, বাগানে কাজ করে
ছাত্র-ছাত্রীরা সমস্ত রকমের আনন্দ লাভ করতে পারে। শখের পাশাপাশি অবসর
সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বাগান শুদ্ধ চিত্তের অনুভূতির সৃষ্টি করে। হতাশা,
দুঃখ ও কষ্টের লাগব হয়। স্রষ্টার সৃষ্টির গোপন রহস্য প্রকৃতির মাঝেই
লুকিয়ে রয়েছে। তিনি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের একটি উক্তির উল্লেখ করেন,
“Nature never did betray the heart that loved her. It gives shelter
when man is in distress” (প্রকৃতিকে ভালোবাসলে প্রকৃতি কখনো
বিশ্বাসঘাতকতা করে না) – William Wordsworth.
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষক মিসেস রীতা মীর একজন বিখ্যাত কবি উইলিয়াম
ওয়ার্ডসওয়ার্থের উক্তি উল্লেখ করে বলেন, “One is nearer to God’s heart
in the garden.”অর্থ্যাৎ যে কোন ব্যক্তি বাগানে থাকা বা কাজ করার সময়
স্রষ্টার খুব কাছাকাছি আছে বলে মনে হয়। তাঁর মতে প্রকৃতিই ছিল তার মা,
শিক্ষক, সান্তনা দানকারী, আরোগ্যদানকারী, সাহায্যদানকারী। তিনি প্রকৃতি
প্রেমী ছিলেন। আমিও ঠিক তাই মনে করি। গাছ ও ফুলের মধ্যে আমি স্রষ্টার
প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।
তৃতীয় শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক মিসেস চেলসিয়া বাড়ৈ বলেন, ফুলের বাগান মানে
বাগানে ফুলের বিশাল সমারোহ থাকবে এমন নয়। প্রকৃতিকে ভালবেসে একটি মনোরম
পরিবেশ তৈরীর করা। সুন্দর আবহ তৈরীর জন্য ছোট একটু জায়গায় চোখ জুড়ানো
মনের মত করে পরিবেশটাকে সাজানো। বাগানে কাজ করলে মন ভাল থাকে, সবুজ
প্রকৃতির মাঝে থাকা যায়। এতে মানসিক চাপ কমে যায়। ছেলে মেয়েদের মন ভাল
থাকে।  তারা স্কুলে এসে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে শিখে।
প্লে শ্রেণির শিক্ষক মিসেস পারুল রানী দাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি
উক্তি উল্লেখ করে বলেন. “বাল্যকাল থেকে আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই।
কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনমতে
কাজ চলে মাত্র, কিন্তু বিকাশ লাভ হয় না।”
তিনি বলেন, পুঁথিগত শিক্ষা আর যাই হোক মননের চর্চা হয় না। আপনারা লক্ষ্য
করে দেখবেন শিশুরা ছবি আঁকার ক্লাসে ভীষণ মনোযোগী। কারণ শিশুরা সৃজনশীল
কাজে বেশ আনন্দ পায়্। শিশুরা ছবি আঁকার ক্লাসে স্বাধীনতা পায়, স্বকীয়তায়
মেধা মননে শিশুরা অনন্য। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় শিশুদের মনোজগতে
প্রবেশ করার কৌশল আমাদের জানা নেই। এমনকি আমরা তাদের জানতে বা আবিষ্কার
করতে চাইনা।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা ছবি আঁকলে তাদের ১. তাদের পরিমিতিবোধ বাড়ে ২.
রুচিবোধ তৈরী হয় ৩. আত্মশক্তি প্রতিষ্ঠা হয় ৪. নিয়মশৃঙ্খলা শেখে ৫.
কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পায় ৬. মানবিক মূল্যবোধ ‍বৃদ্ধি পায় ৭. একাকিত্ব
ভুলে যায় ৮. প্রাণচাঞ্চল্য বেড়ে যায় ৯. চেতনাবোধ বৃদ্ধি পায় ১০.
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়।
ছাত্র-ছাত্রীরা জানালো,“ প্রতিদিন স্কুলে এসে বাগান পরিস্কার করা, বাগানে
পানি দিতে, আগাছা পরিষ্কার  করতে তাদের ভালো লাগে। ক্লাসের অবসর সময়ে এই
বাগানেই তাদের সময় কাটে।
শিশুবান্ধব স্কুল হিসেবে সদর উপজেলায় এই স্কুলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে এই
বিদ্যালয়ের। এই সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মনোরম
করতে বাগান করা সহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আপনি আরও পড়তে পারেন