দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিম্ন আদালতের চারজন বিচারককে চাকরি থেকে বরখাস্তের অনুমোদন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রবিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের একটি সুত্র। এদিকে ফুলকোর্ট সভায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গাফিলতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বিচারিক আদালতের আরো দুজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃতরা চার বিচারক হচ্ছেন, কুমিল্লার সাবেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) এস.এম আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা জজ মো. রুহুল আমিন খোন্দকার, জামালপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মো. সিরাজুল ইসলাম ও খুলনার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মঈনুল হক।
বর্তমানে এই চার বিচারক আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আইন মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে চার বিচারককে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে দুয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
চার বিচারককে বরখাস্তের অনুমোদনের নথি গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এখন আইন মন্ত্রণালয় বরখাস্তের সরকারি আদেশ জারি করবে।
গত বুধবার সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুপ্রিমকোর্টের ফুলকোর্ট সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। দুজন বিচারপতি ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি সভায় উপস্থিত ছিলেন। চার বিচারককে বরখাস্তের অনুমোদনের নথি বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।
এদিকে ফুলকোর্ট সভায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গাফিলতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বিচারিক আদালতের দুজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-কক্সবাজারের সাবেক মুখ্য বিচারিক হাকিম বর্তমানে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা জজ সৈয়দ হুমায়ুন আজাদ ও ময়মনসিংহের জেলা জজ আদালতের অধীন ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালতের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী বিচারক মোহাম্মদ কামাল খান।
গত ৩০ জুন প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত, অশালীন, অসংযত ও মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করায় ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. জুয়েল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করে আইন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে জুয়েল রানাকে বিচারকাজ থেকে প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিচারকদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দেখভাল করে জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটি। ওই কমিটির প্রধান হলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বরখাস্ত হওয়া ওই চার বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট। নির্দেশনা অনুসারে ওই চার বিচারকের বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত করে সেই প্রতিবেদন জিএ কমিটির কাছে পাঠানো হয়। জিএ কমিটি ওই বিচারকদের বরখাস্তের বিষয়টি ফুলকোর্ট সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ফুলকোর্টের সভায় চার বিচারককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সূত্র জানায়, বিচারক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ওই চার বিচারক বিভিন্ন সময়ে অজামিনযোগ্য মামলায় জামিন, আদালতে কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি ও অসদাচরণের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ওরফে দুলাল সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিমকোর্ট যেভাবে চার বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন, ঠিক সেভাবে আইন মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চার বিচারককে বরখাস্তের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের ফুলকোর্টের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছায়। মাঝখানে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সেজন্য আমরা এখনও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
কবে নাগাদ বিচারকদের বরখাস্তের আদেশ জারি করা হতে পারে-জানতে চাইলে আইন সচিব বলেন, বরখাস্ত করতে হলে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। সেই প্রক্রিয়া শেষ করেই দ্রুত বরখাস্তের আদেশ জারি করা হবে। সম্ভবত চলতি সপ্তাহে চার বিচারককে বরখাস্ত করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে বিচারকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম আমিনুল ইসলাম ২০১১ সালে ঢাকা জেলা জজ আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারকের দায়িত্ব পালনকালে একাধিক মামলায় গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন। তিনি রাজধানীর হাজারীবাগ থানার চাঞ্চল্যকর নাদিয়া হত্যা মামলায় আসামি মো. শিকদার শফিকুর রহমানকে জামিন দেন।