সরকার জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায় বলেই ‘সচতেনভাবে’ বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে সাড়া দেয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ দিয়ে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সবাইকে সম্পৃক্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির বিগত আন্দোলনে খুন ও গুমের শিকার হওয়া পাঁচ নেতা-কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে এর আয়োজন করে ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ নামের একটি সংগঠন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কাল বিলম্ব না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। কিন্তু সরকার তাতে কর্নপাত করেনি।
“উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তা করেনি। কারণ বিষয়টিকে তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সম্ভব হবে না। কারণ এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব নয়”, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক নাকচ করার আরো উদ্দেশ্য আছে। কারণ তারা জানে, বাংলাদেশে ঐক্য সৃষ্টি হলে তারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না।
সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“গণমাধ্যম বন্ধ করে, সম্পাদকদের জেলে নিয়ে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়”, বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে কি চলছে? গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন চলছে। উদ্দেশ্য এমন, ক্ষমতায় থাকতে যদি লক্ষ লোককেও হত্যা করতে হয়, করতে হবে। বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার রাষ্ট্রের বাইরে। সত্যিকারে অর্থে দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে।
জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
গুম ও খুনের শিকার হওয়া নেতা-কর্মীদের কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। জোর করে নিখোঁজ করে দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ। আজকে সভ্য পৃথিবীতে সকলের চোখের সামনে ঘটনাগুলো ঘটছে। অথচ বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিবেক আজকে নিশ্চুপ।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বিএনপির ১ হাজারের বেশি খুন, ৫’শর ওপরে গুম, হাজারের ওপরে পঙ্গু, লাখ লাখ মামলা ও হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলে আছেন। এখন দেশে আইনের শাসন নেই। গণতন্ত্রের কথা মুখে বললেও গতন্ত্রের লেশ মাত্র ও নেই। গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একজন মানুষকে তুলে নেওয়া হলো, অথচ এর জবাব আজ নেই। এর জবাব কে দেবে? রাষ্ট্রকে এর জবাব দিতে হবে। কারন রাষ্ট্র জনগণের নিকট দায়বদ্ধ।’
আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সহ সভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ছাত্রদল নেতা মামুন খান।