বাংলাদেশের মেয়েদের বিক্রি করা হয় ভারতের যৌনপল্লীতে

বাংলাদেশের মেয়েদের বিক্রি করা হয় ভারতের যৌনপল্লীতে

বাংলাদেশি নারী পাচারে ভারতীয় চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতা ভিত্তিক একটি নারী পাচার চক্র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই নেটওয়ার্কের ফাঁদে বেশি পড়ছে মফস্বলে কলেজপড়ুয়া ও গ্রামের উঠতি বয়সী মেয়েরা। সম্প্রতি ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচি জেলা পুলিশ বাংলাদেশি এক নারীকে উদ্ধার করার পর এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। কেরালা পুলিশের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতীয় একটি চক্র তাদের দালালদের মাধ্যমে নারী সংগ্রহ করছে। প্রতি নারীর জন্য দেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। পরে ওই নারীদের ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতার বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লী এবং আবাসিক হোটেলে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনো নারীকে বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করছে। তবে উঠতি বয়সী এবং সুন্দরী নারীদের ভারত থেকে পাকিস্তান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যেও পাচার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের মেয়েদের বিক্রি করা হয় ভারতের যৌনপল্লীতে

এদিকে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখের বেশি নারী শিশু পাচার হয়েছে ভারতে। তবে বেসরকারি বিভিন্ন এনজিওর দাবি, পাচারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে থাকে। অপর দিকে ভারতীয় সমাজ কল্যাণ বোর্ডের এক তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশের ১৮টি রুট দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার নারী ও শিশু অবৈধ পথে ভারতে পাচার হচ্ছে। পাচারের শিকার বেশির ভাগ নারীর স্থান হয় ভারতের যৌন পল্লীতে।

কেরালা পুলিশের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশি এসব নারী সংগ্রহ করা হচ্ছে ভারতীয় দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় এই দালালরা প্রথমে একটি নারীকে টার্গেট করে। এরপর ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। এভাবে দালাল চক্রের হাত থেকে নারীরা পৌঁছে যায় মূল পাচার চক্রের হাতে। নারী পাচার চক্র এসব নারীকে প্রথমে কলকাতায় রাখে। এরপর সেখান থেকে মুম্বাই ও হায়দারাবাদে পাঠায়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৪ হাজার ২শ ২২ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সাথে ২শ ৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। পাচারকারীরা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে নারী ও শিশুদের পাচার করে। উত্তরের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে নারী ও শিশুদের পাচার করা হয়। ওই অঞ্চলের সীমান্ত এলাকার ১১টি রুট দিয়ে নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য যশোরের বেনাপোল সীমানা অত্যন্ত সহজ রুট। বেনাপোল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম বঙ্গের বনগাঁ শহর। প্রথমে পাচার করা নারী ও শিশুদের এ শহরে রাখা হয়। পরে পাচারকারীদের সুবিধা মতো তাদের অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। যশোর থেকে পাচারকারীরা ভোমরা, কলারোয়া, দর্শনা জীবননগর ও ঝাউডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশু পাচার করে থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী ফরিদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, যশোরের ঝিকরগাছা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, পার্বত্যাঞ্চলের কক্সবাজার ইত্যাদি জেলাগুলো পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারী পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি অভিনব কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে প্রেমের ফাঁদ ফেলে নারী পাচারকারীরা টার্গেট করছে মফস্বল কলেজের ছাত্রীদের। সীমান্তবর্তী উপজেলার কলেজ ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে বেশি পাচার করা হচ্ছে। মানব পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করা একাধিক সংস্থার কর্মকর্তা জানান, নারী পাচারকারী চক্র এখন লেখাপড়া না জানা বস্তিবাসী কিংবা স্বল্পশিক্ষিত পোশাক কর্মীদের পরিবর্তে টার্গেট করছে মফস্বলের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রীদের। প্রথমে পাচারকারীরা কোনো এক ছাত্রীকে টার্গেট করে। পরে তাদের নিয়োগকৃত তরুণ বা যুবকেরা সেই টার্গেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ছাত্রীর কথিত প্রেমিক এ সময় তার পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা টার্গেটকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে আনে। পরে পাচারকারী মূল চক্রের হাতে তুলে দেয়।

মানব পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করা সংগঠনের কর্মীরা জানান, গত বছর যশোরের অভয়নগরের বনগাঁ গ্রামের ওসমান গনি মোল্লার কলেজপড়ুয়া মেয়ে আসমা খাতুনকে তার কথিত প্রেমিক বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। নওয়াপাড়া মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আসমাকে পরে ভারতে পাচার করে মুম্বাইয়ের এক পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয় পাচারকারীরা। সম্প্রতি হায়দারাবাদ থেকে তাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণত দরিদ্র-অসহায় পরিবারের সহজ-সরল কিশোরী, তরুণী-গৃহবধূদের পাচার করা হয়। তবে সম্প্রতি প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা নানা কৌশলে নারী পাচারের ঘটনা বেড়ে গেছে।

Save

Save

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment