মরে যাচ্ছে মানুষের বিবেক

মরে যাচ্ছে মানুষের বিবেক

 রাশিম মোল্লা:

কয়েক বছর আগেও গ্রামের মানুষ এতটা নিষ্ঠুর ছিল না। সাক্ষাতে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরত। হৃদয়ের সবটুকু আন্তরিকতা দিয়েখোঁজ নিত উভয় পরিবার-পরিজনের ।

মরে যাচ্ছে মানুষের বিবেক

বাড়িতে ভাল কছিু আয়োজন হলে প্রতিবেশিকে না দিয়ে খেত না। অতিথী আসলে বাসার ছোট বড় সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বইত। কিন্তু এখন এমন চিত্র আর দেখা মিলেনা কোথাও। এমনকি গ্রামেও। বাড়িতে কে আসল কে গেল কারো দেখার যেন সময় নেই। কেউ মগ্ন হিন্দি সিরিয়ালে কেউবা ব্যাস্ত ফেসবুক আর গেমসে। প্রতিটি মানুষই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে সুন্দর একটি মন নিয়ে। তাহলে কেন সমাজে এমনটি হচ্ছে? এজন্য আসলে কারা দায়ী? কেউতো আর মায়ের পেট থেকে নিষ্ঠুর হয়ে জন্ময় না। আসলে এর মূল কারণ পারিবাড়িক শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অভাব। তার প্রমান সম্প্রতি সময়ের তিন চারটি ঘটনা। জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার একটি স্কুলে মোট ৩০ জন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জন শ্রেণীকক্ষে বসে পর্ণগ্রাফি দেখে। অপরদিকে, ১০০ জন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ৮৬ জন মোবাইল ব্যবহার করে যাদের মধ্যে ৭৬ জন পর্ণগ্রাফি দেখে। ফলে তাদের আসক্তির মাত্রা বেড়ে চলছে পাশাপাশি লেখাপড়ায় অমনোযোগীর সংখ্যাও লক্ষণীয়। কিছু বিকৃত রুচিহীন অনুষ্ঠান, পর্ণগ্রাফি মিউজিক ভিডিও কিশোর ও যুবকদের খারাপ কাজে উদ্দীপনা তৈরির পাশাপাশি অনুকরণে উৎসাহ দেয়। নরসিংদীতে সামান্য একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে আজিজা নামে এক কিশোরীর হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন দেয় তারই চাচার শ্যালক। অভিযোগ চাচী বিউটি বেগমের মোবাইল ফোন চুরি । এ নিয়ে চাচী বিউটি ও স্বজনরা ভাসুরের দুই মেয়ে আজিজা ও মাফিয়াকে সন্দেহ করেন। এরই প্রেক্ষিতে দেড় সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফিরিয়ে না দিলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবার হুমকিও দেন চাচির স্বজনেরা। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে আজিজা অপহৃত হয়। রাত নয়টার দিকে বাড়ির অদূরে ফলবাগানে হাত ও চোখ বেঁধে আজিজার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে আজিজার শরীরের ৯৬ শতাংশই পুড়ে যায়। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভতি করা হয় । সেখান থেকে আশংকাজনক অবস্থায় রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নোয়াকান্দা গ্রামে সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী ও তার মাকে পিটিয়ে আহত করেছে এক বখাটে। অপরাধ বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। দীর্ঘদিন ধরে গজারিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড (ইটাখলা) এলাকার লাল মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া প্রথমে স্কুলে যাওয়ার পথে প্রেম প্রস্তাব। পরে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। স্কুল ছাত্রীর মামেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সী হওয়ায় বিয়ে দিব না বলে ফয়সালকে চলে যেতে বলি। তখন ফয়সাল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। যেই কথা সেই কাজ । ফয়সাল নামে এক বখাটে ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে মেয়োটকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে মা ও মেয়েকে মারধোর করে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেঁকী ডিগ্রী কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেরা জয়শ্রী চক্রবর্তী ((১৭)) নামে কলেজ ছাত্রীকে মারধর করে। চুল কেটে দেয়া হয়। লজ্জা আর অপমানে আত্মহত্যা করেন জয়শ্রী। যশোরের চৌগাছা উপজেলার গয়ড়া গ্রামের আলতাপ হোসেনের ছেলে মসিয়ার রহমান (৩০) বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় সাবেক ইউপি মেম্বরসহ ১০/১২ জন সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে শিক্ষক মসিয়ার রহমানকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বাড়ির সন্নিকটে রোস্তম আলীর দোকানের পাশে একটি মেহগনি গাছে তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারপিট করে। এই যদি হয় র সমাজের চিত্র। তাহলে আগামীতে সামাজিক অবক্ষয় কোথায় গিয়ে ঠেকবে? এমন পরিস্থিতিতে সমাজের সচেতন গ্রামবাসীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তার চেয়েও বেশি দায়িত্ববান হতে হবেপিতা-মাতাকে। ছেলে-মেয়েকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। পারস্পরিক বন্ধন বাড়াতে হবে। শুধু লেখাপড়ার প্রতি খেয়াল নিলেই হবে না । আগ্রহী করে তুলতে হবে খেলাধুলায় । উদ্বুদ্ধ করতে হবে সামাজিক কাজ-কর্মের প্রতি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment