শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা করবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা করবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদল, আল-শামস বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদেরকে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র দুদিন আগে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিবছর দিবসটি পালন করে। এবারো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা করবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ

প্রতিবছরের মতো এবারো এদিন সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এবার ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

নতুন কর্মসূচি হিসেবে এবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। একই সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এই বিভাগগুলোকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০১৭ পালন উপলক্ষে গত ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত জাতীয় কর্মসূচি প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।

১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাঘন দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। তারা চেয়েছিল বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে। এ জন্য তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য মানুষদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতকদের এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনী।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন ও আরো অনেকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ঘাতকেরা। বুদ্ধিজীবীদের তারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাজাকার-আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। বিজয় অর্জনের পরে রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে একে একে পাওয়া যায় হাত-পা-চোখ বাঁধা দেশের খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। হত্যার আগে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তাঁদের ওপরে। এসব মৃতদেহ পাওয়ায় উন্মোচিত হয় ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। এ ঘটনায় বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।

বাঙালি জাতি বরাবরই বিজয়ের উৎসবের আগে এই দিনটিতে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে থাকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। সকালে মিরপুর ও রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অগণিত মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এবারো নানা আয়োজন থাকবে দিনভর।

এবারো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামবে মিরপুর ও রায়েরবাজারের স্মৃতিসৌধে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, সর্বস্তরের মানুষ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার আহ্বান জানাবেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।

জানা গেছে, আগামী ১৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি প্রকাশ করবে। গত বছর দলটির কর্মসূচির মধ্যে ছিল- ১৪ ডিসেম্বর সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭:১৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৭:৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮:৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। বিকেল ৩:০০টায়  রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন। সূত্র জানায়, এবারো একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

১৩ ডিসেম্বর থেকে কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারো বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। দিবসটি পালন উপলক্ষে সকালে সব আবাসিক হল ও ভিসি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয় জোহরের নামাজের পর।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেকটর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, উদীচী, খেলাঘর ও বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment