অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

খেলা শুরুর ৫৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ভারতের জালে বল জড়ায় বাংলাদেশ। তার আগেই অবশ্য ভুটানি রেফারি চোকি ওম ফাউলের বাঁশি বাজান। প্রথম মিনিটের ওই চাপ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে বাংলাদেশ। আগাগোড়া প্রাধান্য বিস্তার করা ম্যাচ ১-০ গোলে জিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ মুকুট মাথায় তুলেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। শিরোপাজয়ী গোলটি করেন শামসুন্নাহার।

অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

স্কোরলাইনে ম্যাচের চিত্র অবশ্য পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি। আক্রমণভাগ, মাঝমাঠ ও রক্ষণে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে স্বাগতিকরা। গোটা ম্যাচে নিজেদের দুর্গ সামলে হাতেগোনা দু-একবার আক্রমণে উঠেছে ভারত। তা হার এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিপরীতে একের পর এক আক্রমণে ভারতের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখেন তহুরা খাতুন-অনুচিং মগিনিরা।

শিরোপার লড়াইয়ে ৪-৪-২ ফরমেশনে শুরু করে ভারত। পরিস্থিতি বুঝে ৫-৪-১-এ রক্ষণাত্মক কৌশল নেয় দলটি। রক্ষণে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় মজুদ রেখে তারা মূল প্রতিরোধ গড়ে মাঝমাঠে। মনিকা চাকমা ও মারিয়া মান্ডাদের পরিণত ফুটবলে এ কৌশলও ব্যর্থ হয়। ডিফেন্স চেরা পাস, উইং ধরে দ্রুত আক্রমণের সুযোগ আসছিল নিয়মিতই। ফরোয়ার্ডরা তা কাজে লাগাতে পারলে জয়টা আরো বড় হতে পারত।

আক্রমণভাগের কেন্দ্রে খেলা তহুরা খাতুন তিনবার একা পেয়েছিলেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক মনিকা দেবীকে। ময়মনসিংহের এ ফুটবলার একবারও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। সবচেয়ে সহজ সুযোগটা এসেছিল ৬১ মিনিটে। অনুচিং মগিনির বাড়ানো বল অনুচিংয়ের পা ঘুরে আসে তহুরার কাছে। এ ফরোয়ার্ড গোলরক্ষক মনিকা দেবীকে কাটালেও নিজের সঙ্গে গোলপোস্টের অ্যাঙ্গেল দুরূহ করে নেন। তার আগে ২২ মিনিটে আরো একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়। মনিকা চাকমার থ্রু-পাসে গোলমুখ খুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। গোলরক্ষক মনিকা দেবীকে একা পেয়ে অনুচিং মগিনি পোস্টে শট না নিয়ে সতীর্থ মার্জিয়ার উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়ে সুযোগ নষ্ট করেন। ১০ মিনিট পর কমলাপুর স্টেডিয়ামে প্রায় হাজার দশেক দর্শককে মাতিয়ে তুলেছিলেন তহুরা। মনিকা চাকমার বাড়ানো বল ধরে প্রথমে দুই ডিফেন্ডারকে কাটান এ ফরোয়ার্ড। পরবর্তীতে দুর্দান্ত দক্ষতায় বাম দিক দিয়ে বক্সে প্রবেশ করে দূরের পোস্টে শট নিয়েছিলেন। বল জালে না গিয়ে পোস্টঘেঁষে বাইরে গেলেও তার ব্যক্তিগত ঝলকানিতে গর্জন ওঠে গ্যালারিতে।

বাংলাদেশ একের পর এক আক্রমণের ঝড় তোলার সুফল পায় ৪১ মিনিটে। ডান দিক থেকে শামসুন্নাহারের বাড়ানো বল ধরে গোলে শট নিয়েছিলেন অনুচিং। তা রক্ষণে সৃষ্ট জটলায় প্রতিহত হলে ফিরতি প্রচেষ্টায় শামসুন্নাহারের ভলি জালে জড়ায় (১-০)।

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই কর্তৃত্ব ধরে রাখে স্বাগতিকরা। ডান দিক থেকে মার্জিয়ার কর্নার-কিকে বক্সের মধ্যে থেকে হেড নিয়েছিলেন অনুচিং। বল ক্রসবার উঁচিয়ে বাইরে যায়। উইংয়ে শামসুন্নাহারের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক বাংলাদেশকেই দেখেন দর্শকরা। আর তাই বড় ব্যবধানে জিততে না পারার আফসোস থেকেই গেছে দর্শকদের।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ফুটবলে এটি ছিল বাংলাদেশের তৃতীয় শিরোপা। ২০০৩ সালে ঢাকায় প্রথম সাফ শিরোপা পায় সিনিয়র পুরুষ দল। ২০১৫ সালে সিলেটে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ছেলেদের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজরা। গতকাল তৃতীয় শিরোপা এল মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নেপথ্য কারিগর গোলাম রাব্বানী ছোটনের হাত ধরে এল তিনটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ঢাকা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিকরা। গতকাল সাফ অঞ্চলে নারী ফুটবলের প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ। ছেলেদের একের পর এক ব্যর্থতার বিপরীতে নারী দলকে আঁকড়ে ধরেই চলছে বাংলাদেশ ফুটবল।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment