কেমন অবিশ্বাস? জানতে চাইল আলামিন বলেন- এই ধরেন আপনি আপনার স্ত্রীকে অবিশ্বাস করেন। আপনি মনে করেন আপনার স্ত্রী অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িত। অফিস যাওয়ার সময় একটা স্পাইক্যাম ঘরে বসিয়ে গেলেন। ফিরে এসে তা থেকে দেখতে পাবেন সারা দিন আপনার স্ত্রী কী করল বা কার সাথে কথা বলল। একইভাবে আপনার স্ত্রীও হয়তো এমন করছে।
আলামিন বলে যান- আবার ব্যবসায়িক অবিশ্বাসও আছে। আগে দু-চার-পাঁচ লাখ টাকা মানুষ সামান্য বিশ্বাসের উপরে একে অন্যকে দিতো। এখন কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ব্যবসায়ীরা এখন অনেক বেশি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করছে ব্যবসায়িক লেনদেন বা প্রতিশ্রুতির প্রমাণ রাখতে।
স্পাইক্যামের দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একইভাবে উঠতি বয়সী বা টিনেজাররা দেদারছে কিনছে গোপন ক্যামেরা। নিজ সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে একান্ত আলাপচারিতা এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গোপনে কেউ কেউ ধারণ করছে।
বসুন্ধরা সিটির স্পাইক্যাম বিক্রেতা আবু তালিব বলেন, সাধারণত ব্যাগে করে খুচরা আমদানিকারকরা দোকানে দোকানে এসে স্পাইক্যাম সরবরাহ করে যান। এসবের নির্দিষ্ট কোনো আমদানিকারক নেই।
মোতালিব প্লাজার ইলেক্ট্রনিকস দোকানদার শামসুল আলম জানান, অক্টোবর মাসেই কেবল মোতালিব প্লাজা থেকে কমপক্ষে ২ হাজার স্পাইক্যাম বিক্রি হয়েছে।
আবার সম্প্রতি স্পাইক্যাম ব্যবহার করে একাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারও করেছে কয়েকজনকে।
বাজার ঘুরে দেখা যায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে স্পাইক্যাম বা গোপন ক্যামেরা। যেসবের বেশিরভাগই অবৈধভাবে লাগেজের মাধ্যমে দেশে আসছে। এসবের কোনো বৈধ আমদানি হচ্ছে না।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি ছাড়াও মোতালিব প্লাজা, স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় সহজে দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় মিলছে নানা রকম স্পাইক্যাম। ঘড়ি, কলম, বোতাম, বেনিটি ব্যাগ, দেয়ালে ঝোলানোর কি-বোর্ড, মোবাইল চার্জার, লাইটার, পুতুল বিভিন্ন কিছুর আদলে দেদারছে বাজারে মিলছে গোপন বা স্পাই ক্যামেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যার নাম-ই হলো স্পাই বা গোপন ক্যামেরা, তা এভাবে বিক্রি মোটেও ঠিক নয়। সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও পারিবারিক অবিশ্বাসের এক জলজ্যান্ত বহিঃপ্রকাশ এই স্পাইক্যাম।
সরকারের একাধিক সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিও বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞানী নেহাল করিম বলেন, প্রযুক্তি অবশ্যই ঠেকিয়ে রাখার জিনিস নয়। কিন্তু স্পাইক্যাম বা গোপন ক্যামেরার ব্যবহারে যে সুবিধা, তার থেকে সামাজিক অসুবিধা বেশি হবে, যদি তা লাগামহীন ছড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, এটি নিয়মতান্ত্রিক হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বেও ব্যবসায়িক নজরদারি বা স্টাফদের নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পাইক্যাম ব্যবহার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটির অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।
নেহাল করিম বলেন, সহজেই ধারণা করা যায় যে সমাজের উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার বেশি করছেন। তার মতে এমনসব যন্ত্র ব্যবহারে সামান্য অবিশ্বাসের চিড় থেকে বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হতে পারে, যা স্বাভাবিক নয়।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, এখনো স্পাইক্যাম বা গোপন ক্যামেরা বিক্রি এর ব্যবহার নিয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা বা আইন নেই। জানতে চাইলে মহানগরর গোয়ান্দা শাখার ডিসি আব্দুল বাতেন বলেন, তাদের কাছে স্পাইক্যাম বিক্রি সংক্রান্ত কোনো বিশেষ অভিযোগ নেই। এ ব্যাপারে কোনো আইনের কথাও তার জানা নেই।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পুলিশের আইসিটি বিভাগ, ইকুইপমেন্ট বিভাগ এবং মিডিয়া শাখাতেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানও তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে নিয়ম-নীতির ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুক্রবার সকালে বলেন, তিনি সময় পেলে তার নিজের দরকারে ইউটিউবে বসেন। তখন দেখতে পান অনেকেই অনেক ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয় ভিডিও করে ইউটিউবে বা ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এগুলোর বেশিরভাগই যে গোপনে ধারণ করা, তা সহজেই বোঝা যায়। বিষয়টি আশঙ্কাজনক বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো নীতিমালা নেই। স্পাই/গোপন অথবা গোয়েন্দা ক্যামেরা ব্যবহার, আমদানি ও বিক্রির নীতিমালার বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল দু-এক দিনের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।