মাশরুম চাষে সফলতা

মাশরুম চাষে সফলতা

Brand Bazaar

রোগমুক্ত, সুস্থ্যজীবন, বেকারত্ব দুরীকরণ,বাণিজ্যিক ভিত্তিক মাশরুম চাষকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সাল থেকে মাশরুম চাষের যাত্রা শুরু করেন আজিজুল ইসলাম। ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ টেকনিক্যাল কলেজপাড়া নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত মাশরুম কেন্দ্রটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর টেকনিক্যাল কলেজ পাড়ায় আজিজুল ইসলামের ১ একর জমির ওপর ঋষি গ্যানো মাশরুম নিয়ে শ্রমিক কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

মাশরুম চাষে সফলতা

মুখে মাক্স ও হাতে গ্লোভস পড়ে কাজ করছে ১৫০ থেকে ১৭০জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক। কেউ ল্যাবে, কেউ কালচারে, কেউবা প্রক্রিয়াজাতে ও প্যাকেটিং কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। পুষ্টি ও ওষুধিগুণ সম্পন্ন ঋষি/ গ্যানো ডার্র্মা আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদিত মাশরুম বাজারজাত করা হচ্ছে সারাদেশে। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ওয়েস্টার মাশরুম চাষ হয়। পরবর্তীতে দেশে সর্বপ্রথম গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণন করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। ২০১০ সালে গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুমে বীজ উৎপাদনে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন।
যুগোপযোগী এ মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, অতিরিক্ত সচিব (গবেষনা) ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, হটি কালচার উইং এর পরিচালক কুদরত-এ- গণি, হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সাইফুল হুদার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই মাশরুম উৎপাদকের সফলতাও কম নয়। বাংলাদেশে ঋষি ও ওয়েস্টার মাশরুম উৎপাদনে সফলতায় কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরুষ্কার ১৪১৮ বঙ্গাব্দ, বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার অ্যাওয়ার্ড-২০১২, স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০১২, বছরের শ্রেষ্ট কৃষি উদ্যোক্তা পুরুস্কার অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও সারাদেশে মাশরুম উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার অ্যাওয়ার্ড, সিটি অ্যাওয়ার্ড, স্টার অ্যাওয়ার্ড, তানজিন কালচারাল ফাউন্ডেশন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহু সনদ, পুরষ্কার ও সুনাম অর্জন করেছেন। মাশরুম চাষে আজিজুলের সফলতা দেখে তার পরামর্শমতে কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও সৈয়দপুরে মাশরুম চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে অনেক বেকার যুবক ও যুবতী।

ফাতেমা এন্টার প্রাইজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি অনেক সাধনা, কষ্ট করে মাশরুম চাষে সফল হই। গত ২০১৫ সালে জামাত-বিএনপির হরতাল ও অবরোধে প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ টাকা আমার ক্ষতি সাধন হয়েছে। ২০১৭ সালে সম্প্রতিক বন্যায় সৈয়দপুর শহড় রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সরকার মাশরুম প্রকল্পের উপর একটু নজর দিলে আমাদের দেশে তৈরী পুষ্টি ও ওষুধি গুণ সম্পন্ন মাশরূম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আমার মাশরুম খেয়ে শতশত লোকের জটিল ও কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, জটিল রোগের জন্য মানুষকে আর হাসপাতালে যেতে দিবনা। আমার মাশরুম খেয়ে সুস্থ্য করব। আমি অনেক পুরুস্কার পেয়েছি। আমি ২০১৮ সালের মধ্যে ২ হাজার দক্ষ মাশরুম চাষী তৈরি করব। একই সময়ের মধ্যে ৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করব। তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩ লক্ষ প্রজাতির মাশরুম আছে, তারমধ্যে ২০০ প্রজাতি ঔষধ হিসাবে খাওয়া যায়। আর বাকী ১ হাজার ৮০০ বিভিন্ন উপায়ে খাওয়ার উপযোগী হয়ে থাকে।
মার্কেটিং ডাইরেক্টর মো. রাকিব হাসান বলেন, আমাদের সৈয়দপুরের মাশরুম সারাদেশে যায় এবং হাজার হাজার লোকের উপকার হয়েছে। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার জন্য আমাদের মাশরুম দেশজুরে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষিকা মোছা: লিপি আক্তার, ব্যবসায়ী বাবু রনজিত রায়, কাঠমিস্ত্রি আজগর আলী সহ অনেকে। তারা বলেন, আমাদের বিভিন্ন রোগে বাঁচার কথা ছিলনা, দেশে ও বিদেশে অনেক চিকিৎসা করেছি তবু ভালো হইনি, তবে আজিজুল ভাইয়ের মাশরুম খেয়ে আমরা সম্পুর্ন সুস্থ্য আছি। মাশরুম সম্পর্কে মাশরুম ইন্সটিটিউটের উপ পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার বলেন, গ্যানো মাশরুম মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিয়মিত সেবনে টিউমার, ডায়েবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডেঙ্গু, এইচআইভি, যকৃৎ, ক্যান্সার, কিডনি, জন্ডিস, গ্যাস্টিক, আমাশয়সহ বহু রোগ প্রতিরোধ, নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment