ডাক ও টেলিযোগাযোগে অর্জনের বছর ২০১৭

কালের চাকায় ঘুরে বিদায় নিচ্ছে ২০১৭ সাল। এ বছর সরকারের অর্জন অনেক। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণসহ কাজ করেছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল, মোবাইল অপারেটরে কোম্পানির কল ড্রপে কল ফেরত, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মোবাইল ফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন সেবা, ফোরজি নেটওয়ার্কে যাওয়ার প্রস্তুতিসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘ডাক টাকা’ চালু ছিল উল্লেখযোগ্য। এনিয়ে সাজানো হয়েছে  ‘টেলিযোগাযোগে উন্নয়নের সালতামামি’।

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনে বাংলাদেশ: গত ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে সাবমেরিন কেবল যখন প্রথম দক্ষিণ এশিয়ায় এল তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকার বিনা পয়সার এই ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এজন্য প্রস্তাবও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া বলে দিয়েছিল এটা নাকি সংযুক্ত করা যাবে না। কারণ, এটা সংযুক্ত করলে বাংলাদেশের সকল তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। কক্সবাজার দিয়ে আসা বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন কেবল দিয়ে পুরো বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগ সরকারই দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নেয়।

২০১৩ সালের শেষের দিকে ১০ একর জমির ওপর ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। প্রকল্পটির কাজ শেষ করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার পরীক্ষামূলক শুরু হয়। সাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল লাইন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে তা সংযোগ স্থাপন করা হয়। সাবমেরিন ক্যাবলটির ল্যান্ডিং স্টেশন চালু হওয়ায় বাংলাদেশ নতুন করে ১ হাজার ৫০০ গিগাবাইটের (জিবি) বেশি ব্যান্ডউইডথ পাচ্ছে। নতুন এ সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদকাল ২০ থেকে ২৫ বছর।

কল ড্রপে কল ফেরত: মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির কাছ থেকে কলড্রপে কল ফেরত আনার কাজটা অপারেটরদের দিয়ে করানো অনেক কঠিন কাজ ছিলো। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কাজটিতে সফল হয়েছে। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত ৩টি বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণ ফোন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩ কল মিনিট, রবি ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কল মিনিট এবং বাংলালিংক ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৬০ কল মিনিট ফেরত দিয়েছে।

এছাড়া সেবার মান নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলছে সংশ্লিষ্টরা। শুধু অভিযোগ অভিযোগ করে তো কোনো কাজ হবে না। তার সমাধান খুঁজে বের করতে কাজ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে এই সেবার মান আরো উন্নত করার টার্গেটে কাজ করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মূল অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস নামের একটি মহাকাশ সংস্থা অবকাঠামো তৈরির এই কাজটি করেছে। অবকাঠামো তৈরি হলেও সম্প্রতি ফ্লোরিডায় ঘুর্ণিঝড়ের কারণে উৎক্ষেপণের সময় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে এবছর মহাকাশে যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। আগামী বছরের মার্চ নাগাদ এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। আর ঋণ হিসেবে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি দিচ্ছে বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

মোবাইল ফোন অপারেটর পরিবর্তন: মোবাইল ফোনের নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন (মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি-এমএনপি) প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক এই সেবা প্রদান করবে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই গ্রাহকদের এই সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে।

এই সুবিধা চালুর ফলে একজন গ্রাহক তার মোবাইল ফোনের নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবে। তবে এক অপারেটর পরিবর্তন করে অন্য অপারেটরে যেতে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। অপারেটর পরিবর্তনের ব্যয় ৩০ টাকা। এ জন্য নিজের ফোন নম্বরটিও পাল্টাতে হবে না। এ সেবা প্রবর্তনের ফলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে গুণগত সেবা প্রদানের প্রতিযোগিতা এবং মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এ সুবিধা চালু রয়েছে। ১৯৯৭ সালে সিঙ্গাপুরে এই সেবা চালু হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১১ সালে এবং পাকিস্তানে এই সেবা ২০০৭ সাল থেকে চালু রয়েছে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘ডাক টাকা’ : গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘ডাক টাকা’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

ডাক টাকা সেবা চালুর ফলে এখন থেকে ব্যাংকিংয়ের বাইরে থাকা গ্রামের মানুষ ভালোভাবে ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন। ডাক বিভাগের টেকনিক্যাল পার্টনার ওয়েপমেন্ট সুইচ প্রোভাইডার (আইটিসিএল) এবং এই সেবা প্রদানকারী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ডি-মানির মাধ্যমে খুব সহজেই ডাক টাকার অ্যাকাউন্ট খুলে পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ-আউট করা যাবে। নাম মাত্র ব্যালেন্স জমার মাধ্যমে নাগরিকরা বিনামূল্যে ‘ডাক টাকা’ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। ২০১৮ সালের মধ্যে ব্যাংকিংয়ের বাইরে থাকা ৩ কোটি মানুষকে এ ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনাই ডাক টাকার লক্ষ্য।

ডাক টাকা’র মাধ্যমে কার্ড, অ্যাপ ও এমপিওএসসহ বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহারের সুযোগ থাকবে (কেনাকাটা-লেনদেন)। নাগরিকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এতে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন (এনএফসি) এবং কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড সুবিধা রাখা হয়েছে।

ফোর জি: ফোর-জি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ফোরজি লাইসেন্সের খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে গত মে মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিআরসি। পরে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়।

অপারেটরদের আবেদন ফি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। লাইসেন্স পেতে দিতে হবে ১০ কোটি টাকা। আর বার্ষিক নবায়ন ফি হবে ৫ কোটি টাকা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment