‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ নিয়ে বর্ষণ কথন…

সিনেমার পোকা মাথায় ঢুকেছে অনেক বছর আগেই। এরপর থেকে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলা, উদ্দেশ্য- স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। নিজেকেই ছাড়িয়ে যাওয়া। এ জন্য হেঁটেছেন বহু বন্ধুর পথ। কিছু কিছু সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লেও হতাশ হয়ে যাননি। লক্ষ্যে থেকেছেন অবিচল। সেই সহস্র মনোবলই তাকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। পাঠক,তার সবকিছুর উদ্দেশ্য একটাই যে নির্মাতারা ভালো কাজ করতে চান, তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ছোটপর্দার বড় নির্মাতা নির্মাণ করছেন চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। এর প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ দিন শুটিং হয়েছে ছবিটির। প্রিয়.কমের সাথে আলাপ শুরুর সময়ই এ তথ্যটি দিলেন বর্ষণ। তিনটি সিনেমায় অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সংখ্যার দিকে থেকে চতুর্থ।গত বছরের আগষ্ট মাসের কথা, নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল একদিন বর্ষণকে ফেসবুকে নক করেন। বলেন, তার অফিসে আসার জন্য। সময় করে একদিন যানও। যদিও নির্মাতা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের তথ্য জানাননি। কেন ডেকেছেন কিংবা কারণটা কী, তাও জানেন না। যাওয়ার পর একটি কাগজ হাতে দিয়ে বললেন- পড়ো। তিনিও পড়লেন। তবে সেটি না বুঝেই। পড়া শেষ হতেই নির্মাতা উজ্জ্বল বললেন, যদি কিছু মনে না করো, তোমার একটি অডিশন নিতে চাই। বর্ষণ শুধু বললেন, ওকে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। কিছুটা সময় যাওয়ার পর আবার বললেন, এই নাও আরেকটা কাগজ, পড়ো। তিনিও পড়লেন। সেই অংশটুকু অভিনয় করেও দেখালেন। গল্পের ভাঁজে ভাঁজে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, সেটি টের পেতে লাগলেন বর্ষণ। কিন্তু রহস্য ভেদ করেই জানালেন চমকপ্রদ এক খবর।সেটি হলো, তিনি একটি সিনেমা বানাতে যাচ্ছেন। নাম ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। সেখানে অয়ন নামে একটি চরিত্র আছে, সেজন্যই তার অডিশন নেওয়া। তবে কথার শেষে এও বললেন, ‘শুধু তুমি না, আরও অনেকেই অডিশন দিয়েছেন।’ যাই হোক, এরপর বর্ষণ চলে যান তার কর্মস্থল চট্টগ্রামে। তারপর আর তার সঙ্গে নির্মাতার তেমন একটা যোগাযোগ হয়নি।

গত সেপ্টেম্বরের কথা। ফের তাকে নক করে মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বললেন, ‘বর্ষণ তুমি কি আবার একটু আসতে পারবে আমার অফিসে? তখন বর্ষণ বলেন, ‘শুক্রবার আর শনিবার ছাড়া আমি ছুটি পাই না। তখন নির্মাতা বললেন, ঠিক আছে।’ এরপর এক শুক্রবার তিনি নির্মাতার অফিসে গেলেন। তখন আবার তার স্ক্রিন টেষ্ট নেওয়া হলো। ফের বললেন, কয়েকদিন পর কনফার্ম করবেন। আবার বেশ কিছুদিন যোগাযোগ নেই। আশার আলো যেমন ক্ষীণকায় হয়ে যায়, বর্ষণের অবস্থা ঠিক তেমনই হয়েছিল। কিন্তু না, তার কয়েকদিন পরই তাকে ফোন দিয়ে জানানো হলো- ঢাকায় আসতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধও হতে হবে। এরপর টানা তিন মাস চলে রিহার্সেল।

কিন্তু বিপত্তি ঘটল আরেক জায়গায়। বর্ষণ তো নিয়মিত রিহার্সেলে অংশ নিতে পারেন না। তাই সপ্তাহে যেই দুদিন ছুটি পান সেই দুদিনই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে রিহার্সেল করে যান। এভাবেই একটু একটু করে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এর মধ্যে অনুপ্রবেশ তার। বর্ষণের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তিনি বলেন, ‘যখন সিনেমাটির স্টোরি পড়ছিলাম তখন মাথার মধ্যে একটা ভিজুয়্যাল স্টোরি কাজ করছিল। সত্যি সত্যিই আমি গল্পের ‘অয়ন’ চরিত্রটার প্রেমে পড়ে যাই। ওর আশেপাশের পরিবেশের প্রতিও। তখন অমাকে বিভিন্নভাবে বোঝানো হতো যে চরিত্রটা কীভাবে একটি লাইনআপ তৈরি করে।’

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এর শুটিং হয়েছে-ঢাকার মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, ঢাকা মেডিকেল, শাহবাগ, সদরঘাট এলাকায়। কোলাহলপূর্ণ জায়গায় শুটিং করাটা নির্মাতা এবং শিল্পীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কথার ফাঁকে ছবিটি নিয়ে বর্ষণ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ব্যতীত সবকিছুই ডিসক্লোজ করতে একটু বাধা রয়েছে। এটা বেসিক্যালি রোমান্টিক একটা প্রেমের গল্প। তবে অন্য যেসব প্রেমের গল্প হয়, তার থেকে আলাদা। এখনও কিছু অংশের শুটিং বাকি রয়েছে।

বর্ষণ এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তার প্রত্যেক নির্মাতারই আলাদা একটা ঢং ও ভঙ্গি রয়েছে। যার কারণে প্রত্যেকটি ছবির জন্যই তিনি চেষ্টা করেছেন, ওই চরিত্রটির মধ্যে ঢোকার। আর এজন্য শুধু রেফারেন্স নয়, বর্ষণ তার কল্পনা শক্তির জায়গাটারও সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। একদিন শুটিং চলছিল রাজধানীর মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে। দৃশ্য ছিল বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন। শুটিং চলাকালীন সময়ই ঘটল বড় ধরনের বিপত্তি। চলন্ত বাইকের সামনেই হঠাৎ করে একজন মানুষ চলে এসেছিল। উক্ত ব্যক্তিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। যদিও অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন। তেমনটা আঘাত পাননি।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার আগে ওয়াহিদ তারেকের ‘আলাগা নোঙর’, এন রাশেদ চৌধুরীর চন্দ্রাবতীর কথা’ ও অঞ্জন সরকার জিমির ‘ক্ষত’তে অভিনয় করেছেন তিনি। যদিও কোনো সিনেমাই এখন পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবিতে বর্ষণের সহ-শিল্পী হলেন শার্লিন ফারজানা। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড অক্টোবরের ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। ছবির কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা এবং সংগীত পরিচালনা করছেন নির্মাতা নিজেই। আর ছবিটি মুক্তির সম্ভাব্য তারিখ তুলে রেখেছেন আসছে পহেলা বৈশাখ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment