‘র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

‘বিশ্ববিদ্যালয়’ জিনিসটা কী? সহজভাবে বলা যায়, উচ্চ শিক্ষার জায়গা। কিন্তু এই উত্তর তো আমার, আপনার। ক্যামেরা আর বুম নিয়ে রাস্তায় নামুন। জনে জনে জিজ্ঞেস করুন। এমন সব উত্তর পাবেন যে, মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। বেছে বেছে সাধারণ মানুষদের জিজ্ঞেস করবেন। তাহলেই মজার সব উত্তর পাবেন। ছোটবেলায় প্রচুর ওয়াজ মাহফিলে গেছি। মসজিদের ঠাণ্ডা ফ্লোরে পাটি বা কার্পেটের উপর শীতের শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে যদিও বহু আখেরি মোনাজাত মিস করেছি, হুজুরদের বক্তৃতা শুনেছি অনেক। দিন দিন দেশে ধর্মের চর্চা বাড়ছে। হিন্দুরা পুজা-কীর্তন বাড়িয়ে দিয়েছে, মুসলমানেরা বাড়িয়ে দিয়েছে ওয়াজ-মাহফিল। এত ধার্মিক লোক দেশে, অথচ দুর্নীতি, অনিয়ম কমার লক্ষণ নাই। যাইহোক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কোনো কোনো হুজুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এমন সব মন্তব্য করতেন, এমনকি এখনো শুনি অনেকে করেন, যা শোনে আমার অবিশ্বাস্য ঠেকে।  হুজুরকে নয়, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। আজব সব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, যারা পড়ান তাঁদের কেউ জান্নাত পাবে না মর্মে বহু ওয়াজ শুনেছি! নিউমার্কেটে একবার ওয়াজ শুনলাম, হুজুর বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী এবং যারা খেলাধুলা, গানা-বাজানা করেন তাঁদের জানাজা পড়া গোনাহ! মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ফতোয়া দেন, বাংলা ভাষা নিয়ে ফতোয়া দেন অনেকে! আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, এসব হুজুরের সাথে পবিত্র ইসলাম ধর্মের সম্পর্ক অনেক দুর্বল। এরা বিভ্রান্ত, এরা পথ হারিয়েছে; ইসলামের আলো এদের এখনো খুঁজে পায়নি।
র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়কতিপয় হুজুরের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক ‘পাপাস্থান’! পাপ হয় না কোথায়? পাপ সব স্থানেই হয়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কি পাপ হয় না? মাঝে মাঝে পত্রিকায় পড়ি, মন্দিরের পুরোহিত আর মসজিদের ইমাম সাহেব এই করেছে, সেই করেছে।  মাদ্রাসার শিক্ষক পাপ করেন, গির্জার ফাদার-ব্রাদাররা পাপ করেন; পাপের বাইরে কেউ নই আমরা। কম-বেশি পাপ আমরা সবাই করি। আল্লাহর ফেরেশতারা কোনো পাপ বা ভুল করেন না। ফেরেশতা তো আমরা নই।  একটা শব্দ এখন সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘র‍্যাগ’। সমাজের সব অনিয়ম, অনাচার বাদ দিয়ে বছরের একটা সময় আমরা এই শব্দটা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকি। জন্ম নিয়ন্ত্রণহীনতা, চুরি, ঘুষ, সুদ, রাস্তার ধুলাবালি, যানজট,  প্রশ্নফাঁস, খাদ্যে ভেজাল, ব্যাংক লুট ইত্যাদি সব সমস্যা আমাদের জনপরিসরে তেমন একটা আলোচিত হয় না। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অনিয়মকেই আমরা নিয়ম বলে ধরে নিয়েছি। পুরো সমাজে যখন পচন ধরেছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাকি থাকবে? তবে হলফ করে বলতে পারি, অন্য অনেক স্থানে যত পাপ হয়, তার চেয়ে অনেক কম হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে অধিকাংশ মানুষই ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। এরা জীবনের কঠিন সব পর্ব পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। পড়াশুনা, খেলাধুলা, টিউশনি, খানাপিনা, দুষ্টুমি, আড্ডা, ঘুম, গান, বিতর্ক,  পহেলা বৈশাখ, ফাগুন ইত্যাদি করেই এদের সময় কেটে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মও আছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে এমন সব ছেলে-মেয়ের অভাব নেই। মন্দিরে দেব-দেবীর সামনে মাথা নিচু করার মানুষও অনেক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমাজের মত ধর্মের নামে অধর্ম আছে, প্রগতির নামে অনাচার আছে। এখানেও কেউ ধর্মের ছদ্মবেশে ঘৃণা ছড়াতে পারে আবার প্রগতির নামে করতে পারে নোংরামি।

মানুষ নিজের পাপের দিকে তাকায় না, অন্যের পাপের দিকে আমাদের নজর বেশি। আর মিডিয়াগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়। সবাই আশা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসবাসকারী সব মানুষ সচেতন হবে, অন্য আট-দশজন মানুষ থেকে তাঁর আচরণ ভিন্ন প্রকৃতির হবে। মানবিকতা আর উদারতার চর্চা এখানে বেশি হবে, এটাই সকলে প্রত্যাশা করে। কিন্তু কখনো কখনো এমন সব ঘটনা ঘটে যে, বিশ্ববিদ্যালয়কে মানুষ গালি দেয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী-সব অংশেরই কেউ কেউ মাঝে বড় পাপ করেন। শিক্ষক কখনো ছাত্র/ছাত্রীর উপর যৌন নিপীড়ন করেন, ছাত্র/ছাত্রীরা কখনো শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়, প্রশাসন কখনো ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়, একদল শিক্ষক মিলে অন্য কোনো শিক্ষককে ফাঁসিয়ে দেয়।

সব বাদ দিয়ে কথা হচ্ছে র‍্যাগ নিয়ে। অনেকে র‍্যাগ দেয়া আর র‍্যাগ ডে পালনকে এক করে ফেলছেন। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই র‍্যাগ দেয়া বা র‍্যাগ ডে পালন করার চল থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নামের সিংহভাগ নিতে হচ্ছে। র‌্যাগ দেয়ার আলোচনায় যাওয়ার আগে র‌্যাগ ডে পালন বিষয়টি ক্লিয়ার করা দরকার। র‌্যাগ ডে পালনের রীতি দেশ ও দেশের বাইরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। পালনের ধরনের পার্থক্য থাকতে পারে। নির্দিষ্ট একটা দিনে সবাই মিলে একটু মজা করা হয়। একটা র‍্যালি হতে পারে, র‍্যালির সাথে বাদকের দল থাকতে পারে,  বাজনার সাথে সামান্য নাচও হতে পারে। সাথে মোরগ-পোলাও খাওয়া হতে পারে। অনেকে রং মাখামাখি করতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগরের র‍্যাগ পালন করার অত্যন্ত চমৎকার একটা দিক আছে। ব্যাচের সব সদস্যের ভোটে এখানে রাজা-রাণী নির্বাচিত হয়। যেমন আনন্দের ব্যাপার, তেমনই রাজা-রাণী নির্বাচনের মধ্যে একটা রাজনৈতিক তাৎপর্য লুকিয়ে আছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয় না বহুদিন। রাজা-রাণী নির্বাচনে সবাই অংশ নেয়। ব্যাচের মধ্যে যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশী, তারাই কেবল রাজা-রাণী নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারেন। গণতান্ত্রিক চর্চা। রাজা রাণী নির্বাচিত হয়ে গেলে কনসার্ট হয়, ডিনার হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার আগে সবাই মিলে একটা দারুণ স্মৃতি নিয়ে বের হয়। ব্যাচের মধ্যে যারা একটু স্মার্ট, দক্ষ, নেতৃত্বসহ নানা গুণে গুণান্বিত এরাই রাজা-রাণী নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এভাবেই জাহাঙ্গীরনগরে র‍্যাগ ডে পালন করা হয়।

দেশের একটি শীর্ষ পত্রিকার চিঠিপত্র পাতায় একজন একটা চিঠি লিখে জাহাঙ্গীরনগরের ‘র‌্যাগিং’ এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে র‍্যাগ ডে নিয়ে আপত্তিজনক কথা লিখেছেন। দেশের সাধারণ মানুষ যা ইচ্ছে লেখা লিখে পাঠাতে পারে। পাতার জন্য নির্দিষ্ট সম্পাদক থাকেন। সম্পাদকের জন্য সহকারী থাকে। তাঁদের দায়িত্ব কোন লেখা যাবে, কোনটা যাবে না, সেটা ঠিক করা। লেখা নির্ধারিত হলে, আধেয় ভালো করে দেখে দিতে হয়। যে পত্রিকার কথা বলছি, সেটি কোনো সাধারণ পত্রিকা নয়, দেশের এক নম্বর পত্রিকা।  পত্রিকাটির উচিত এর ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন কিছু লেখা।

আর র‍্যাগিং এর নামে নির্যাতন কি শুধু বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগরে হয়? অসুস্থ মানুষ সবখানেই আছে। জাহাঙ্গীরনগরে সিএসই বিভাগে প্রথমবর্ষের এক ছেলেকে এমন মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে যে সে অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছেলে ক্যালকুলেটর দিয়েছিল বন্ধুদের। বন্ধুরা বিনিময়ে তার এক চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। এই তো সেদিন ফাইন্যান্স বিভাগের এক ছেলে আত্মহত্যা করেছে। তাঁকে বন্ধুরা ‘কালো’ বলে ক্ষ্যাপাত। গণরুমের গণ-অপমান সহ্য করতে পারেনি সে। বিভাগেও সব পরিষ্কার পোশাক পড়া, স্মার্ট মানুষগুলো তাঁকে আপন ভেবে দুটো কথা কখনো জিজ্ঞেস করেনি। গ্রামের ছেলেটি শহরের সংস্কৃতিকে ধারণ করার সময় পায়নি। আজরাইলকে ডেকে তাঁর সাথে চলে গেছে সে।

আমার বন্ধু মাহমুদুল হাসান খান পেশায় ডাক্তার। তবে সে ডাক্তার না হয়ে স্থপতিও হতে পারত। স্থপতি না হয়ে ডাক্তার হয়েছে বন্ধু আমার। এর পেছনে অন্যতম কারণে ‘র‌্যাগিং’।  ২০০১-২০০২ সেশনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে চান্স পেয়েছিল সে। কদিন আগে নিজেই ফেসবুকে লিখে আগের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেছে সে। স্থাপত্য বিভাগে কীভাবে সিনিয়ররা তাঁদেরকে র‍্যাগ দিয়েছিল, এর বর্ণনা দিয়েছে সে। ব্যাচের ছাত্রী বন্ধুদেরকে হলে শীতের রাতে নাকি একদল মেয়ে বরফ মিশ্রিত ঠাণ্ডা পানি খেতে বাধ্য করেছিল। ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় আমাকে মারতে এসেছিল একদল বড় ভাই। কারণ ক্যান্টিনে খাবার নেয়ার সময় এক বড় ভাইয়ের মুখে নাকি আমার গরম নিঃশ্বাস লেগেছিল! নর্থ হোস্টেলে এক বন্ধু দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় বড় ভাইয়েরা তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করেছিল। এমন নির্যাতনের দুই/একটা ঘটনা সব হলে, সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে।

অথচ বদনাম হয় শুধু জাহাঙ্গীরনগরের। এক্ষেত্রে র‍্যাগ দেয়া আর র‍্যাগ ডে পালন করার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, সেটি বাইরের মানুষদের সবাইকে হয়ত বোঝানো যায়নি। সবাই তো আর র‍্যাগ ডে পালন করে না। এমনিতেই জেনারেশন গ্যাপ বলে একটা বিষয় আছে। মুরুব্বীদের বা বাইরের সবার পক্ষে র‍্যাগ ডে’র সংস্কৃতিকে বুঝে উঠা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই যারা র‍্যাগ ডে পালন করে, দায়িত্বটা তাঁদেরই বেশি এ নিয়ে ভালো প্রচারের ব্যবস্থা করা।

অন্যদিকে নির্যাতনকে নির্যাতন বললে র‍্যাগ শব্দটাও একতরফাভাবে বদনামের হাত থেকে বেঁচে যায়। মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনকে র‍্যাগিং বলে চালিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে নির্যাতন মানেই র‍্যাগিং। ফলে নির্যাতনকে অনেকে অপরাধ ভাবতে পারে না। কেউ কি আমরা র‍্যাগ শব্দের অর্থ খুঁজে দেখেছি? ক্যামব্রিজ অভিধানে র‍্যাগ (rag) শব্দের একাধিক অর্থ দেয়া আছে। বিশেষ্য হিসেবে র‌্যাগ এর মানে হতে পারে-এক টুকরো পুরনো কাপড়, নিম্নমানের সংবাদপত্র,  অর্থ বা অনুদান সংগ্রহের নিমিত্তে ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক আনন্দ অনুষ্ঠান। র‌্যাগ শব্দের আরেকটা অর্থও আছে ইংরেজিতে। কাউকে মজার কিন্তু নিষ্ঠুর কিছু বলাকেও ইংরেজিতে র‌্যাগ বলা হয়। তাহলে এখন দেখা যাচ্ছে, শব্দ ঠিকই আছে। তবে অর্থের ভিন্নতা আছে। অর্থ নির্ভর করবে কোথায় কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর, কাজ কী হচ্ছে।

আমরা বাঙালি। এটা সত্য যে বাংলা ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। এটাও সত্য যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে আমরা রাষ্ট্র স্বাধীন করেছি। কিন্তু এটাও মানতে হবে, স্বাধীন দেশে আমরা এখনো ব্রিটিশ উপনিবেশের সব ভূতকে তাড়াতে পারিনি। বুঝে না বুঝে দুই একটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা এখনো আমাদের আভিজাত্যের প্রতীক বলে আমরা মনে করি। নির্যাতনকে আমরা র‌্যাগ বলি। আবার আনন্দ উদযাপনকেও আমরা র‌্যাগ বলি। আমরা শিক্ষিত মানুষই যদি কাজের সঠিক নাম না দিতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষকে দায়ী করা উচিত নয়। আর যদি ‘র‌্যাগ ডে’ শব্দযুগল বাদ দেয়া না যায় তাহলে,  নির্যাতনকে ‘র‌্যাগ দেয়া’ বলা বন্ধ করতে হবে। নির্যাতনকে নির্যাতন বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব সংকট, দ্বন্দ্ব সৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের তুলনায় শিক্ষিত মানুষের দায়ই বেশি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment