নৌকার জয় হবে: প্রধানমন্ত্রী

নৌকার জয় হবে: প্রধানমন্ত্রী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার জিতে ক্ষমতায় আসবে বলে আত্মপ্রত্যয়ী দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে নৌকায় ভোট দেয়ার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
নৌকার জয় হবে: প্রধানমন্ত্রীগত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশাল, ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী এবং আজ খুলনায় সমাবেশ করলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে এবং বিএনপি শাসনামল এবং তাদের আন্দোলনের সময় সহিংসতার তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে আর বিএনপি করে ধ্বংস।’ আগামী নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকার জয় হবে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সাল উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।’

‘গত নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছেন, উন্নয়ন হয়েছে’ এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চান? যদি চান, তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।’ ‘আপনারা কি চান, দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন’- শেখ হাসিনার এমন আহ্বানে দুই হাত তুলে উপস্থিত হাজারো জনতা জানিয়ে দেন তারা আগামীকেও নৌকায় ভোট দেবেন।

বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে খুলনায় পৌঁছেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৫৮ তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। বেলা তিনটায় শেখ হাসিনা যোগ দেন সার্কিট হাউজ ময়দানের জনসভায়। তার এই সফরকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরেই খুলনা আওয়ামী লীগে ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগের এই সমাবেশে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয় ক্ষমতাসীন দল। আর হাজার হাজার নারী-পুরুষ ময়দানে মিছিল করে আসে।

বেলা তিনটার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী আসেন জনসভাস্থলে। শুরুতেই তিনি দুই হজার ৪১ কোটি টাকার মোট ১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তি স্থাপন করেন। জনসভায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। তারা আগামী নির্বাচনে খুলনায় ছয়টি আসনসহ বিভাগের ৩৬ আসনের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগকে উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।

সব শেষে মোট ২৪ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের আমলে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে বিএনপি সরকারের আমলে কী হয়েছিল তাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করতে চাই। যখনই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আপনারা দেশের উন্নয়ন পেয়েছেন।’

‘অপর দিকে বিএনপি কী করে? জামায়াত কী করে?…তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষকে বাঁচাতে জানে না, মানুষকে হত্যা করতে পারে। যত ভালো কাজ সব বন্ধ করে।’ ‘বিএনপির কাজ ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি। মানুষ হত্যা করা, মানুষকে খুন করা। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা। ওরা যখনই ক্ষমতায় ছিল, সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু করে প্রতিবার মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছুই করে নাই।’

‘বিএনপির সময় এই খুলনা অঞ্চল ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন খুন, প্রতি মুহূর্তে মায়ের কোল খালি হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কঠোর হস্তে জঙ্গি আমরা দমন করেছি। আজকে খুলনা শান্তির নগরী।’
নৌকার জয় হবে: প্রধানমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করে, আমরা এই দেশকে নিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের পথে।… বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই, সেটাই করতে চাই।’ ‘বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলাম, তারা বন্ধ করে দিয়েছিল, এখানে শেখ আবু নাছের হাসপাতাল করেছিলাম, সেটাও বন্ধ করেছিল। যত ভালো কাজ করি, তার সবই বন্ধ করেছে।’

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মংলা বন্দর বন্ধ করে দেয়া, খুলনার কল-কারখানা বন্ধ করে দেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বন্ধ কল-কারখানা চালু, মংলা বন্দর চালু, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আমরা করে দিচ্ছি। মংলা বন্দর পর্যআন্ত যেন রেললাইন যায়, আমরা পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে যশোর হয়ে, বাগেরহাট হয়ে মংলা বন্দর পযন্ত রেললাইন যাবে তার প্রকল্প আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি।’

ভোলায় পাওয়া গ্যাস বরিশাল এবং খুলনায় পাইপলাইনে নিয়ে আসার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে কেউ কুঁড়েঘরে থাকবে না জানিয়ে নিদেনপক্ষে সবার জন্য টিনের ঘর হলেও করে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয় জনসভায়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছে, কোর্ট রায় দিয়েছে। সেই রায়ে সে কারাগারে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নাই, আমাদের কিছু করার নাই। দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বেলা একটায় শুরু হওয়া জনসভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন,  ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম মুন্নিজান সুফিয়ান, রিয়াজুল কবির কাওসার, এছাড়াও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বেসরকারি উন্নয়ন খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment