ভাঙা অংশ দিয়ে স্ত্রী ও ভাবিকে বাইরে বের করে দিতে পারলেও আফসোস

ভাঙা অংশ দিয়ে স্ত্রী ও ভাবিকে বাইরে বের করে দিতে পারলেও আফসোস

নিজের পরা কেডস (জুতা) দিয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। সিটবেল্টের ধাতব অংশ দিয়েও জানালার গ্লাস ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। পরে বিমানে ভাঙা অংশ দিয়ে স্ত্রী ও ভাবিকে বাইরে বের করে দেন, নিজেও বের হয়ে আসেন। কিন্তু ফুফাতো ভাই আর তার আড়াই বছরের সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি মেহেদী।

এভাবেই হাসপাতলের বিছানায় শুয়ে সংবাদমাধ্যমকে কথাগুলো বলেন মেহেদী। গত সোমবার(১২মার্চ)নেপালের কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস–বাংলা বিমান বিধ্বস্তে মাথা-মাথা-ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে মেহেদী এখন নেপালের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ (কেএমসি) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

এরপর আজ বুধবার দুর্ঘটনার সময় ফ্লাইটের ভেতরে মেহেদীর অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

সেদিনের সেই ভয়াল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মেহেদী বলেন, ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণের) আগে প্লেন একটু ঝাঁকুনি দেয়। তখনও ক্র্যাশ হয়নি। প্লেনটি প্রথমে একবার নিচে এসে আবার উপরে উঠে যায়। কিছুক্ষণ পর প্লেনটি বাম দিকে কাত হয়ে যায়। নিজ চোখে কয়েকটা প্লেন দেখেছি, সেগুলো এয়ারপোর্টে ছিল কি-না, আমি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ প্লেনটা একটা বাউন্ডারিতে ধাক্কা খেয়ে ক্র্যাশ হয়।

ক্র্যাশের সময় সিটবেল্ট বাঁধা ছিল উল্লেখ করে মেহেদী বলেন, ক্র্যাশ হওয়ার পর কীভাবে সিটবেল্ট খুলেছি তা বলতে পারব না। পায়ের জুতা ও সিটবেল্টের লোহার অংশ দিয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ভাঙছিল না। ততক্ষণে দেখি প্লেনের সামনের অংশ ভেঙে গেছে, সে অংশ দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে।

প্রিয়জনকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা আর প্রিয়জনদের আকুতি মনে করে সেদিনের সেই ভয়াল ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, আমি সামনের খোলা অংশের দিকে এগিয়ে যাই, কিন্তু পর মুহূর্তে মনে পড়ে, ভেতরে আমার পরিবারের আরও চার সদস্য আছে। আমি আবার ভেতরে ঢুকি। দেখি ভাবি এগিয়ে আসছে, তাকে টেনে বাইরে বের করে দেই।

এরপর আবার ভেতরে ঢুকে স্ত্রীকে ডাকি, তুমি কোথায়? সে বলে, আমাকে বের করো, জ্বলে গেলাম, পুড়ে গেলাম। তখন আমি তাকে টেনে বের করি। তৃতীয়বার ভেতরে ঢোকার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তীব্র আগুন আর ধূসর ধোঁয়া। আমাদের তিনজনের তখনও জ্ঞান ছিল।

বিমানের বাইরে বের হওয়ার পর মাঠে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে দেখতে পাই। তারা আমাদের সাহায্য করে প্লেন থেকে দূরে নিয়ে যায়। বের হওয়ার ২-১ মিনিটের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে প্লেনটি বিস্ফোরিত হয় এবং আগুন ধরে যায়।

উল্লেখ্য, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমানটি গত সোমবার(১২ মার্চ) স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে অবতরণের কথা ছিল। নামার আগেই এটি বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবন্দরের পাশের একটি খেলার মাঠে পড়ে যায়। বিমানটিতে চারজন ক্রু ও ৬৭ যাত্রী ছিল। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হন। আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ৮ বাংলাদেশিসহ ২০ জন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment