আর্জেন্টিনার কেন এমন বাজে হার?

আর্জেন্টিনার কেন এমন বাজে হার?

বিশ্বকাপের বাকি মাস তিনেক। প্রীতি ম্যাচগুলোর মাধ্যমে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে দলগুলো। এর মাধ্যমেই কোচেরা বেছে নিবেন তাদের সেরা স্কোয়াড।

এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশাল ধাক্কা খেতে হলো আর্জেন্টিনাকে। স্পেনের বিপক্ষে ৬-১ গোলে উড়ে গেলো দলটি। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় পরাজয়। এরআগেও অবশ্য একই ব্যবধানে দুই বার হারের স্মৃতি আছে দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে এবং ২০১০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বলিভিয়ার বিপক্ষে।

সবশেষ বিশ্বকাপ এবং কোপার ফাইনালিস্টদের এমন হারে সমর্থকরা যে বিস্মিত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে আকাশী-সাদা জার্সির সঙ্গে হারটি একেবারেই বেমানান।

গত শনিবার ইতালির বিপক্ষে বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে আলবিসেলেস্তাদের। ২-০ গোলে জেতা ম্যাচটিতে বেশ গোছালো ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনা। তবে ইংল্যান্ড থেকে স্পেনে এসেই ভিন্ন রূপে সাম্পাওলির শিষ্যরা। গুনে গুনে ছয় গোল হজম করেছে, বিপরীতে মাত্র একটি গোল করতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু কেন এমন বাজেভাবে হারতে হলো আর্জেন্টিনাকে?

অনেকেই হয়তো প্রথমেই বলবেন, মেসি ছিলো না তো তাই। মেসি তো ইতালির বিপক্ষেও ছিলো না। স্পেনের ঘরের মাটিতে তাদের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা কঠিন। হেরে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এতো বড় হার!

ম্যাচের পর আর্জেন্টিনার সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার মারিও কেম্পেসের বলছিলেন, ‘আমার মনে হয়, তরা খেলোয়াড়দের দায় দিবে না।’

তার কথাই ঠিক। খেলোয়াড়দের উপর নয়, অভিযোগের তীর একজনের দিকেই। তিনি হলেন-ম্যানেজার জর্জ সাম্পাওলি।

প্রথমেই আসছে খেলোয়াড় নির্বাচন। স্পেনের ঘরের মাঠে খেলা। তারওপর দলটি ১৭ ম্যাচে অপরাজিত। এমন ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন সাম্পাওলি। মাঝ মাঠে তার তিন সেনা ছিলেন- এভার বানেগা, লুকাস বিগলিয়া এবং হাভিয়ের মাশচেরানো। বানেগা তার ক্লাব ক্যারিয়ারে দারুণ সময় পার করছেন। কিন্তু বিগলিয়া আর মাশচেরানোর ক্যারিয়ারের সূর্য হেলে পড়েছে। বয়সের ছাপটা খেলার মাঠেও পড়ছে। ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়ে মাঝমাঠ ছেড়ে ডিফেন্সে নেমে গিয়েছিলেন মাশচেরানো। তার ওপরেই কিনা মাঝ মাঠের ভরসা খুঁজলেন সাম্পাওলি।

স্পেনের মতো বল দখলে রাখাতে পটু দলের বিপক্ষে যেখানে শক্তিশালী মাঝমাঠের বিকল্প নেই সেখানে বাকি দু’জনের জন্য নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারলেন না বানেগা।

ডিফেন্সের দিকে ফিরলে দেখা যায়, যে মার্কোস রেহো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বেঞ্চে জায়গা পান না তিনিই শুরু করলেন সেন্ট্রাল ডিফেন্স হিসেবে। স্পেনের প্রথম গোলটির কৃতিত্ব দিয়েগো কস্তাকে দিলেও বাকি পাঁচ গোলের জন্য আর্জেন্টিনার ডিফেন্সকে দায় দেয়াই যায়।

দুবার ভুল পাসে উল্টো স্পেনের আক্রমণভাগকে বল নিজেদের গোলমুখে তুলে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। কবার অমনোযোগী রক্ষণকে দেখতে পেয়ে ডি গিয়ার লম্বা বল থেকে হজম করতে হয়েছে গোল।

ছয় গোল তো খেলো কিন্তু দিলো কয়টা?

নিকোলাস ওতামেন্ডির হেড থেকে আসা গোলটি ছাড়া আর কোন বল জালে জড়াতে পারলেন না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ফের নিষ্প্রভ গঞ্জালো হিগুয়েইন।  প্রথমার্ধে অন্তত দুটি সুযোগ নষ্ট করেছেন হিগুয়েইন। এর মধ্যে একটি তো একেবারেই দৃষ্টিকটু। ঠিক মতো পা লাগাতেই পারলেই চলতো। ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত খেলা যে ফুটবলাররা জাতীয় দলের হয়ে হতশ্রী পারফর্ম করেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবেন হিগুয়েইন। এখানে শুধু গোল মিসের বিষয়টিই নয়, তার চেষ্টার অভাব চোখে পড়ছিলো বাজেভাবে। গোল পেস্টের সামনে একেবারেই অলস দেখাচ্ছিলো হিগুয়েইনকে। খেলায় যেনো মন নেই, নেই আত্মবিশ্বাস।

এই দল নিয়ে বিশ্বকাপে কতদূর যাবে আর্জেন্টিনা? প্রশ্নটা বেশ পীড়াদায়ক সমর্থকদের জন্য। রাশিয়ার টিকেট পেতে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করতে হয়েছিলো মেসিকে। এই এক ঘোড়া দিয়ে আর কত রেস জিততে চায় আর্জেন্টিনা!

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment