আসামির সঙ্গে তুরিন আফরোজের গোপনে বৈঠক, হতে পারেন বরখাস্ত

আসামির সঙ্গে তুরিন আফরোজের গোপনে বৈঠক, হতে পারেন বরখাস্ত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এক আসামির সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ড. তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, আসামির কাছে মামলার স্পর্শকাতর কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন তিনি।

অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে আইন অনুযায়ী বরখাস্ত করা হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপসহ অভিযোগ প্রমাণ হলে বার কাউন্সিল বাতিল করতে পারে তার পেশাদারি সনদ।

ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, অব্যাহতি দেওয়ার কোনো চিঠি আমি পাইনি। এছাড়া প্রসিকিউশন টিমে যোগদানের পর থেকে আমি যা কিছু করেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেইকরেছি।

Brand Milk

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘তাকে (তুরিন আফরোজ) প্রথমে রংপুরের মামলা (ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা) থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। এরপর তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ পর্যালোচনা করে

মঙ্গলবাব (৮মে) সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার কাছে থাকা সব নথিপত্র প্রসিকিউশনে জমা দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ বুধবার (৯মে) সকালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়।

ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান।

জানা গেছে, প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে তুরিন আফরোজকে গত ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় । এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনকালে জানান। প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাদের সাক্ষাৎ হবে।

এ সময় ড. তুরিন আফরোজ জানান, সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তারা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন। পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়।

তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, ‘আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা’। এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তাকে গ্রেফতারের আদেশের অনুলিপি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

তদন্ত সংস্থা জানায়, ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর পুলিশে যোগ দেন। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পান। এছাড়া পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন।

একাত্তরের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে ওয়াহিদুল হকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর হিসেবে ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজকে নিয়োগ দেয় সরকার। পরে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেন তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment