এবারের রোজাও ‘চড়া দামে’ শুরু

প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছিল, এবার পণ্যের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আছে। রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি। গতকাল শুক্রবার রমজানের প্রথম দিনেও অনেক চড়া দামে পণ্য কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। রোজার প্রস্তুতির জন্য গত কয়েক দিন ধরেই এমন বাড়তি দাম দিয়ে পণ্য কেনাকাটা করছেন তারা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে গতকাল কেনাকাটা করতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতি বছর রমজানে বেগুনের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এ কারণে সব বছর রমজানে বেগুন বাদে অন্য সবজির কেনাকাটা করেন। কিন্তু এবার সব সবজির দামই এত চড়া যে, কেনাকাটা করা দায়। রোজার প্রস্তুতির জন্য আগের সপ্তাহের মতো ৩০ থেকে

৩৫ টাকা কেজি ভেবে এক কেজি করে সবজি কেনাকাটা করেছিলেন। কিন্তু দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়ে যাওয়ায় আধা কেজি করে টমেটো, শসা ও করলা কিনছেন তিনি। এসব সবজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা করে দাম রাখা হয়েছে। কাঁকরোল দাম ৮০ টাকা শুনে নেননি তিনি।

মিরপুর শাহআলী মার্কেটের ক্রেতা রিকশাচালক সুরুজ মিয়া বলেন, রোজায় গরিব মানুষ মাছ ও মাংস খেতে পারে না। একটু শাকসবজি কেনাকাটা করে খায়। কিন্তু এবার দামের কারণে তাও ঠিকমতো ভাগ্যে জুটছে না। এখানে প্রতি কেজি ঝিঙ্গা ও চিচিঙ্গার দাম হাঁকা হচ্ছে ৬০ টাকা, এমনকি কচুরলতির দামও একই।

শুধু সবজি নয়, রোজায় চড়া দামে কিনতে হয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনি, চিড়া, মুড়ি, মাছ, মাংস ও মুরগিও। এবার বিভিন্ন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর কম থাকলেও তার সুবিধা পাননি ক্রেতারা। বিশেষ করে রোজার এক মাস আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা যাতে ক্রেতাদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক দাম আদায় না করে সেজন্য কোম্পানিগুলো তাদের লাভের অঙ্কও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। বরং ক্রেতাদের চড়া দামেই কিনতে হয়েছে তেল। এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায়। এবার পর্যাপ্ত লবণ বাজারে থাকলেও রোজায় চড়া দামে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে লবণও। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত সুপার লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর সাধারণ প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

একই অবস্থা মাংসের দরেও। গতকাল রাজধানীর কোনো বাজারেই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দরে মাংস বিক্রি হয়নি। সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী রোজায় ৪৫০ টাকায় দেশি গরুর এবং ভারতীয় গরুর মাংস ও মহিষ ৪২০ টাকায় বিক্রির কথা। আর খাসির মাংস ৭২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস বিক্রির কথা ছিল ৬০০ টাকায়। কিন্তু গতকাল প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকায়, যা দু’দিন আগেও ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা ছিল। আর ছাগল ও খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকায়।

মগবাজারের ক্রেতা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আশ্বাস দিলেও তা পূরণে তারা অনেকটা ব্যর্থ। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে অভিযান। এবার বাজার তদারকি জোরদার করার কথা বলা হলেও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ কারণে সবজির দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা।

এ বিষয়ে খোলা পণ্যের বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর। তিনি বলেন, ‘মাছ-সবজির মতো পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া নেই। এ কারণে দাম বাড়ালেও আইন অনুযায়ী কিছু করার নেই। তবে যেসব পণ্য কেনাবেচায় চালান ব্যবহার হয়, সেসবের দামের বিষয়ে তদারকি অব্যাহত আছে। এ ক্ষেত্রে মূল্য অস্বাভাবিক বাড়ানো হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment