চাঁদপুরে অ্যাডভােকেট জহিরুল ইসলামের স্ত্রী ফেন্সী খুন-স্বামী অ্যাডভােকেট জহির আটক

চাঁদপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভােকেট জহিরুল ইসলামের স্ত্রী ও গল্লাক ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ মহিলা আ’লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শাহীন সুলতানা ফেন্সীকে (৫০) সোমবার (৫ জুন) রাত ১১টায় শহ‌রের ‌ষোলঘর পাকা মস‌জিদ এলাকায় তার নিজ বা‌ড়ি‌তে এই হত্যার ঘটনা ঘ‌টে।

রা‌তেই ঘটনাস্থল থে‌কে পু‌লিশ নিহ‌তের লাশ উদ্ধার ক‌রে‌ছে এবং তার স্বামী‌কে জিজ্ঞাসাবা‌দের জন্য থানায় নেয়া হ‌য়ে‌ছে। মাথার পিছনে লোহা জাতীয় ভারি কিছু দিয়ে আগাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলেই এই মৃত্যু বলে ধারনা পুলিশ সহ সংস্লীস্ট মহলের। ত‌বে কে বা কারা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তা এ এখ‌নো পর্যন্ত জানা যায়‌নি।

নিহত শাহীন সুলততানা ফেন্সীর বাবার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের মৈশাদী গ্রামে।

খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ালী উল্লাহ ওলি ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থালে পৌছেন। খুনের আলামত যেনো কোনোভাবেই নস্ট না হয় সে জন্যে পুলিশ তার বাসায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। রাত ১২ টার পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ালী উল্লাহ ওলি জানান, ‘মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার মাথা জোরালো আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ওয়ালী উল্লাহ ওলি বলেন, নিহতের স্বামী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনো নিশ্চিতি হওয়া যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে তা বলা যাবে।

এ দিকে খুনের সংবাদ শহরে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, রাজনীতিবীদ ও দলীয় সিনিয়র নেতা-কর্মী, সংবাদকর্মীসহ শহরের মানুষজন তার বাসার সামনে ভিড় জমাতে থাকে।

নিহতের ছোটো ভাই ফোরকান উদ্দিন খান জানান, লোকমারফতে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসে তার বোনকে ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের ভিবিন্ন স্থানে রক্তমাখা ছিলো। হত্যার পূর্বে অ্যাড. জহিরুল ইসলাম কিছু লোকজন নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই আমরা ফেন্সির হত্যার খবর শুনতে পাই। এরপর খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। ফোরকান আরো জানান, ১৯৮৬ সালে অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামের সাথে তার বোন শাহিন সুলতানা ফেন্সির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিভাদ হয়। তারই সূত্রধরে সোমবার দিবাগত রাতে ইফতারের পর (যেকোনো সময়) তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত শাহিন সুলতানা ফেন্সি ৩ মেয়ের জননী।

নিহত শাহিন সুলতানা ফেন্সির আরেক ভাই ষোলঘর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাঈমুর রহমান খান বলেন অ্যাড. জহিরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী আমার বোন শাহিন সুলতানা ফেন্সি। তার অনুমতি না নিয়ে ৫ বছর আগে জুলেখা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে। এ নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে মনমালিন্য চলছিলো। বিষয়টি আমরা পারিবারিকভাবে জানলেও বোন জামাতা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রতিবাদ করতে পারেনি। কারণ আমার ৩টি ভাগ্নি রয়েছে। আমার বোনকে অ্যাড. জহিরুল ইসলাম হত্যা করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ইনভেস্টিকেশন অব ব্যুরো (পিআইবি), চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

উল্লেখ্য ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা ফেন্সী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ চাঁদপুর জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়িকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯২-১৯৯৮ খ্রিঃ পর্যন্ত। তিনি জাতীয় মহিলা সংস্থা চাঁদপুর-এর চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ খ্রিঃ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ইতিপূর্বে বেগম আইভী রহমান ও অধ্যাপিকা খালেদা খানম-এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা ছিলেন তিনি।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চাঁদপুর জেলা শাখার মহিলা সম্পাদিকা ছিলেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মহিলা সমিতি ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী সমিতির আহ্বায়িকা এবং মহিলা কলেজ পুনর্মিলনী কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয় ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আবু নছর,চাঁদপুর প্রতিনিধি

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment