গোমাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু পালন হচ্ছে | দৈনিক আগামীর সময়

গোমাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু পালন হচ্ছে | দৈনিক আগামীর সময়

গোমাংস ও দুধের সংকট মেটানো এবং আমিষের চাহিদা পূরণে খুলনা ও বাগেরহাটের চার উপজেলার ২৮টি গ্রামে আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু পালন শুরু হয়েছে। এ জাতের গাভী প্রতিদিন ১৮ কেজি করে দুধ দিতে সক্ষম। আর পূর্ণ বয়স্ক একটি ষাঁড় থেকে ১৫ মণ মাংস পাওয়া যাবে। যা আগামী তিন বছরের মধ্যে কোরবানির পশু ও দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এ লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় ব্রাহমা জাতের সিমেন দিয়ে ৩৩৪টি গাভীর প্রজনন শুরু হয়েছে এবং এ পর্যন্ত মোট ৩৫টি বাচ্চার জন্মও হয়েছে।

 

এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ২৮টি গ্রাম হচ্ছে মহানগরীর লবণচরা, পশ্চিম বানিয়া খামার, বাগমারা, গল্লামারী, খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি, রাজাপুর ও বাধাল, ফুলতলা উপজেলার ধোপাখোলা, মশিয়ালী, দক্ষিণডিহি, উত্তরডিহি, শিরোমনি, যুগ্নীপাশা, গাবতলা, বুড়িরডাঙ্গা, আলকা, দামোদর ও ডাকাতিয়া এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী, বুড়িগাংনী, রাজপাট, গাওলা, মাদারতলী, নতুন ঘোষগাতি, ঘাটভিলা, সুড়িগাতি, সারুলিয়া ও মেঝের গাওলা।

কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র খুলনার সহকারী পরিচালক ডা. কিরণ কান্তি রায় জানান, খামারিদের মধ্যে এ নতুন জাত নিয়ে সাড়া পড়েছে। এর ফলে খামারিরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে পশুখাদ্যে স্বর্নিভরতা অর্জন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

কৃত্রিম প্রজনন খুলনা নগরীর সহকারী কর্মকর্তা শেখ সালাহ উদ্দিন জানান, রূপসা ও মহানগরী এলাকায় ৯৮ জন গরুর খামারি এই মাংসাল জাতের গরু উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছেন। ৬ মাস বয়সী এঁড়ের ওজন দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন মণ। পূর্ণবয়স্ক এঁড়ের ওজন ১৫ মণ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

মোল্লাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকবর আলী হাজরা জানান, তিন বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে গো-মাংস ও দুধের সংকট কাটবে।

 

ফুলতলা উপজেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সহকারী জিল্লুর রহমান জানান, উপজেলায় নতুন জাতের ২৪টি বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। চাষিদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, দেশীয় জাতের তুলনায় ব্রাহমা জাতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

মোল্লাহাট উপজেলার নাশুখালি গ্রামের চাষি হাসান শেখ জানান, দুইমাস বয়সী এঁড়ের ওজন ৬০ কেজি ছাড়িয়েছে। তার খামারে দু’টি এঁড়ের জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকার খাবার খরচ হচ্ছে।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার খামারি রবিউল মোল্লা জানান, তার খামারের দু’টি বাছুরের ওজন প্রতিদিন গড়ে ৫০০ গ্রামের উপরে বাড়ছে। আশা করছি দু’বছর পর ষাঁড় দু’টি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিদিন মাথাপিছু মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম। সরবরাহ হচ্ছে ১০২ গ্রাম। মাথাপিছু প্রতিদিন দুধের চাহিদা ২৫০ গ্রাম। সরবরাহ আছে ১১২ গ্রাম। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ভারতীয় গরু কোরবানি ও প্রতিদিনের মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছে। ভারত থেকে কোনো কারণে দেশে গরু আমদানি বন্ধ হলে মাংসের সংকট দেখা দেয়। মাংসের সংকট মেটাতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিফ ব্রিড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়ার আওতায় মহানগরীসহ খুলনার রূপসা ও ফুলতলা উপজেলা এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দেশীয় জাতের গরুর প্রতিদিনের দৈহিক ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। আর ব্রাহমা জাতের গরুর প্রতিদিনের দৈহিক ওজন ১ হাজার থেকে ১৫শ গ্রাম পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়। বাছুর জন্মের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি দানাদার খাবার খেতে শুরু করে। দু’মাস থেকে ছয়মাসের বাছুরের প্রতিদিন ১শ টাকার খাবার লাগে। ছয় মাসের ওপরের বয়সের ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুশ টাকা খাবার বাবদ খরচ হয়। পূর্ণ বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ১৫ মণ হয়। আর গাভী প্রতিদিন ১৮ কেজি করে দুধ দেয়।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৩৪টি গাভীর প্রজননে ব্রাহমা জাতের সিমেন ব্যবহার হয়েছে। প্রকল্প আওতাভুক্ত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৬টি এঁড়ে ও ১৯টি বকনা বাছুরের জন্ম হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ অনেক খামারের ষাঁড় বিক্রির উপযোগী হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ব্রাহমা জাত সম্পর্কে বলেন, প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জৈব সারের উৎপাদনের উদ্দেশ্যে মাংসাল জাতের গরু উৎপাদন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এই মাংসে ক্ষতিকারক দ্রব্য পাওয়া যায়নি। কোরবানির পশু ও প্রতিদিনের মাংসের ঘাটতি পূরণে দুই-তিন বছর সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment