শীতে ত্বক যেন রুক্ষ না হয়, জেনে রাখুন ১০ টিপস

শীত এলেই বাসাতে ধুলোবাতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। চারপাশের শুষ্ক আবহাওয়ায় আমাদের ত্বক হয়ে উঠে রুক্ষ, খসখসে। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ রীতি মেনে শীত তো আসবেই। তাই বলে বসে থাকলেও তো চলবে না। 

শীতের শুষ্ক বাতাস ত্বকের আদ্রতা শুষে নেয় ফলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। এছাড়াও বয়সের কারণে, পুষ্টির অভাবে এবং বংশীয় কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে।

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্নে বাজারে প্রচলিত অনেক লোশন এবং ময়েশ্চারাইজার ক্রিম পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের ত্বকেই সেগুলো সমান কার্যকর হয় না। সঠিক ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার না করার ফলে ত্বকের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। 

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্নে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন এবং সহজলভ্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এ নিয়ে পাঠকের জন্য কিছু টিপস তুলে ধরা হলো।

* অলিভ ওয়েল: ত্বকের যত্নে জলপাই তেল বা ওলিভ ওয়েল অনেক প্রসিদ্ধ। এতে থাকা এন্টিওক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি এসিড ত্বকের জন্য অনেক ভাল। এটা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে স্বাভাবিক করে। ত্বকে নিয়মিত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল লাগান। গোসলের আগে ত্বকে ভাল করে অলিভ ওয়েল লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন। এরপর গোসল করে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান। ২ টেবিল চামচ অলিভ ওয়েলের সাথে ৪ টেবিল চামচ লাল চিনি এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান।

* দুধের সর: দুধের সরে আছে ল্যাকটিক এসিড যা শুষ্ক ত্বক নিরাময় করতে পারে। এর প্রাকৃতিক গুনাগুণ ত্বকের কোমলতা রক্ষা করে। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, ১ চা চামচ সর মিশিয়ে ত্বকে মাখুন। কিছুক্ষণ রেখে তারপর গোসল করুন। এটা প্রতিদিন করতে পারেন। ৪ টেবিল চামচ ময়দার সাথে পরিমাণ মত দুধের সর মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের যত্নে এই ফেসওয়াস অনেক কার্যকরী।

* মধু: মধুকে বলা হয় সব চেয়ে বেশি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিওক্সিডেন্ট, এন্টিমাইক্রবিয়াল এবং হামেক্ট্যান্ট আছে। যা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার নিশ্চিত করে এবং ত্বককে আরো নরম করে। এতে ত্বকের জন্য উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেলস আছে। গোসলের আছে ত্বকে মধু মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে তারপর গোসল করুন। এটা নিয়মিত করলে দ্রুত ত্বক মসৃণ হয়।

* টক দই: দধি ত্বকের যত্নে অনেক কার্যকরী। এতে ত্বকের প্রয়োজনীয় পানীয় উপাদান আছে এবং ত্বককে মসৃণ করার অন্যান্য ভাল ব্যাকটেরিয়া আছে। এছাড়াও এটা ত্বকের চুলকানি সাড়াতে খুব ফলপ্রসূ। প্রতিদিন ত্বকে দই মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে এরপর গোসল করুন। এটা ত্বকে থাকা মৃত চামড়া দূর করবে এবং ত্বককে অনেক তরতাজা করবে। আধা কাপ টক দইয়ের সাথে ৩ টেবিল চামচ চটকানো পেঁপে মিশিয়ে নিন। এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা দিনে একবার করে করবেন।

* নারিকেল তেল: ত্বকের যত্নে নারিকেল তেল অনেক প্রাচীন পদ্ধতি। এতে থাকা ফ্যাটি এসিড শুষ্কভাব দূর করে ত্বককে কোমল করে। রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম নারিকেল তেল ত্বকে মাখিয়ে নিন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এটা ত্বককে আরো নরম এবং তুলতুলে করবে। এছাড়াও নিয়মিত গোসলের পর ত্বকে নারিকেল তেল লাগাতে পারেন।

* এভোকাডো: এভোকাডোতে প্রচুর ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এবং এন্টিওক্সিডেন্ট আছে যা ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ ত্বকের মৃতকোষগুলোকে জীবিত করে। প্রথমে এভোকাডো চটকিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর ত্বকে মাখুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা দিনে একবার করে করবেন। অথবা পাকা এভোকাডোর অর্ধেক এবং সাথে আধা কাপ মধু মিশিয়ে চটকিয়ে নিন। তারপর শুষ্ক ত্বকে মাখিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন।

* ওটমিল বা যবের খাবার: যবে আছে উচ্চ মাত্রায় প্রটিন যা ত্বকের যত্নে অত্যান্ত উপকারি। এটা ত্বকের প্রয়োজনীয় পানিশূন্যতা দূর করে এবং ময়েশ্চারাইজার নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এতে ত্বকের শুষ্কভাব দূর করে ত্বককে কোমল করার অন্যান্য সব উপাদান আছে। বাথটাবে ১ কাপ যবের খাবার দানা ঢেলে দিন। সাথে কয়েক ফোঁটা লেভেন্ডার ওয়েল মেশান। এরপর ২০-৩০ মিনিট বাথটাবে ডুবে থাকুন। এছাড়া ১ টি চটকানো এভোকাডোর সাথে ১ কাপ যব মিশিয়ে নিন। তারপর সামান্য কুসুমগরম পানি মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। শুষ্ক ত্বকে মাখিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করে এটা ব্যবহার করুন। শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্নে এই ফেসপ্যাক খুব কার্যকরী।

* কাঠবাদাম: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ কাঠবাদামে শুষ্ক ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় লুব্রিক্যান্ট এবং ইমোলিয়েন্ট আছে। এতে থাকা পুষ্টিকর এন্টিওক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘণ্টা পূর্বে পরিমাণ মত কাঠবাদাম তেল সামান্য গরম করে ত্বকে হালকা করে মাখুন। এছাড়াও ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চা চামচ কাঠবাদাম তেল মিশিয়ে পান করুন। তবে এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে কাঠবাদাম ব্যবহার করবেন না।

* এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী: ঘৃতকুমারীতে ত্বক কোমল করার উপাদান, এন্টিসেপ্টিক, এন্টিফানগাল ইত্যাদি উপাদান আছে যা, শুষ্ক এবং খসখসে ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করতে সাহায্য করে। একটা পরিষ্কার এলোভেরার পাতা কেটে জেল বের করুন। শুষ্ক ত্বকে জেল লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে এটা দুইবার করে করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

* লেবুর রস: লেবুর রসে থাকা এন্টিওক্সিডেন্ট ত্বকের পরিচর্যায় সরাসরি সাহায্য করে। এটা মৃত চামড়া ঝরিয়ে ফেলে এবং ত্বকে সতেজ করে। লেবুর ফালি করে ত্বকে ভালভাবে ঘষুন। ১০ মিনিট পর গোসল করুন। এটা প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। মুখের ব্রণ দূর করতেও লেবু অনেক কার্যকরী।

নিজের ত্বককে সুন্দর, কোমল ও মসৃণ রাখতে নিজেকেই যত্নশীল হতে হবে। তাই শীতে উল্লিখিত বিষয়গুলো নজরে রাখতে পারেন- চেহারার সৌন্দর্য ও ত্বককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে। 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment