৩ দিনে ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিজয় দিবস ও  ইংরেজি নববর্ষে ফুলের ব্যবসা জমেনি। তাই মাথায় হাত উঠেছিল ফুলচাষিদের। এখন আসন্ন ফাল্গুন মাসকে কেন্দ্র করে সারা বছরের মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।  যশোরের ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের কারণে দুটি বিশেষ দিবসে আশানুরূপ ব্যবসা করতে নাপারায় ক্ষতির মুখে রয়েছেন তারা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সামনের বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইনস ডে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। আর এই তিনটি উৎসবকে কেন্দ্র করে ৬০ কোটি টাকার মতো ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালি ও পানিসার এলাকার প্রায় ছয় হাজার কৃষক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেছেন রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। সারা বছর লোকসানের হিসাব মেলানোর জন্য বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর নির্ভর করে থাকেন তারা।

হাড়িয়া এলাকার ফুলচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার মাঘ মাসে একটুও বৃষ্টি হয়নি। আর এই বছর গোলাপ গাছের দড়াকচ (গাছ থেকে নতুন শাখা বের হয়, যেখানে ফুল ফোটে) বের হয়নি। তাই ফুলের উৎপাদন কম ছিল, এদিকে দামও কম ছিল; যে কারণে এখনও লাভের মুখ দেখিনি। তাই সামনের তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে বাজারে ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি। ভালো দাম পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।’

উপজেলার পাটুয়াপাড়ার ফুলচাষি রমজান আলী বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে ৭টি উৎসবকে ঘিরে বেচাকেনা করে থাকি। উৎসবগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা দিবস ও ইংরেজি নববর্ষের বেচাকেনা শেষ হয়েছে। তবে বেচাকেনায় তেমন একটা ভাল ফল পাওয়া যায়নি। তবে সামনের তিনটি উৎসবে ভাল ফুল বিক্রি করে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’

পানিসারা এলাকার ফুলচাষি আমিনুর রহমান বলেন, ‘গতবার গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। তাই এবার এক বিঘা জমিতে এই ফুল বেশি চাষ করা হয়েছে । কিন্তু আজকের বাজারে (৭ ফেব্রুয়ারি) ৪ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আশা করছি সামনের তিন উৎসবের বাজারে দাম ভালো পাবো।’

এদিকে গদখালি বাজারের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ফুলের বাজার মোটামুটি ভালো। তিন উৎসবের আগে ফুলের দাম আরও বাড়বে। ফলে চাষিরা লাভবান হবেন।’

ফুলচাষি ও বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম  বলেন, ‘সারা বছর চাষিরা টুকটাক ফুল বিক্রি করেন। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ফেব্রুয়ারির তিনটি প্রধান উৎসব। আর  এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই মূলত চাষিরা বিশেষভাবে ফুল পরিচর্যা করে থাকেন। যেহেতু এবার উৎপাদন একটু কম, তাই চাহিদা থাকবে বেশি। সেক্ষেত্রে বেশি দামেই ফুল বিক্রি হবে। নানা সমস্যার পরও এই মাসের তিন উৎসবের বাজার ধরতে প্রস্তুত চাষিরা। আমরা এবার প্রায় ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment