মন্ত্রীর আপত্তিতে ‘মৃতপ্রায়’ ওয়াইম্যাক্স সেবা চালুর পরিকল্পনা থেকে সরে গেল বিটিসিএল

দেশে ১১ বছর আগে তারবিহীন ইন্টারনেট সেবা ‘ওয়াইম্যাক্স’ সেবা চালু করে অন্য কোম্পানিগুলো। বর্তমানে তারা যখন আর টিকতে না পেরে পাততাড়ি গোটাতে বসেছে, তখন নতুন করে সেবা চালুর পরিকল্পনা করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানি বিটিসিএল। তবে মন্ত্রীর আপত্তিতে ‘মৃতপ্রায়’ এ সেবা চালুর পরিকল্পনা থেকে সরে গেল বিটিসিএল।

গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে এ বিষয়ে অনুমোদনও পায় সরকারের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) এক বৈঠকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সামনে বিটিসিএলের ওয়াইম্যাক্সের বিষয়টি উঠলে তিনি শক্ত অবস্থান নেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সারা দুনিয়া থেকে যখন ওয়াইম্যাক্স উঠে গেছে তখন এ সেবায় বিটিসিএলের আগ্রহ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। ‘এটি তো ১৫ বছর আগের প্রযুক্তি। বাতিল প্রযুক্তি নিয়ে কেন বিটিসিএল প্রকল্প করছে? এটি হতে পারে না- এমন মন্তব্য করে তিনি এ প্রকল্প না নিতে নির্দেশনা দেন।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করা হলেও সেই টাকা জনগনকেই শোধ করতে হবে। অহেতুক দেশকে এত বড় ঋণের মধ্যে ফেলার অধিকার কারও নেই বলে কড়া ভাষায় বলেন তিনি। এর আগে অনেকবার লাইসেন্স চাইলেও বিটিসিএল কখনই ওয়াইম্যাক্সের বিষয়ে তৎপর ছিল না। গত বছর এ নিয়ে তাদের তৎপরতায় খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বিস্ময় প্রকাশ করে।

অথচ ২০০৮ সালে যখন দেশে সেবাটির প্রচলন করা হয় তখনও বিটিসিএলের লাইসেন্সের জন্য সুযোগ রাখা হয়। মাঝে আরও কয়েকবার এ সেবা দিতে তাদেরকে প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

বর্তমানে দেশে তিনটি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স আছে – বাংলালায়ন, কিউবি ও ওলোর। বলতে গেলে সবার সেবা একেবারেই সংকুচিত হয়ে এসেছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের শেষে তাদের কার্যকর সংযোগ সংখ্যা আছে মাত্র ৬১ হাজার। ২০১৩ সালে যা ছিল পাঁচ লাখের ওপরে।

বাংলালায়ন ও কিউবি এ সেবা দেওয়া শুরু করে। ২০১৩ সালে যুক্ত হয় ওলো। তবে তারা সেই অর্থে কিছুই করতে পারেনি।

২০১৩ সালে দেশে থ্রিজি চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে ওয়াইম্যাক্সের সেবা সংকুচিত হতে থাকে। সর্বশেষ ফোরজি চালু হওয়ায় এখন ওয়াইম্যাক্সের আর কোনো সুযোগই নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বলতে গেলে ওয়াইম্যাক্সের ব্যবসা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন করপোরেট খাতে নজর দিলেও সেখানেও প্রতিযোগিতায় তেমন পেরে উঠছেন না। ফলে দিনকে দিন বাজার হারাচ্ছে।

২০১৩ সালের জুনে ওয়াইম্যাক্সের মোট গ্রাহক ছিল পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার। এক বছর পরে তা নেমে আসে দুই লাখ ৮১ হাজারে। জুন ২০১৫ সালে এসে কার্যকর সংযোগ দাঁড়ায় এক লাখ ৭৯ হাজার। পরের জুনে তা চলে আসে এক লাখ ১২ হাজারে। ২০১৭ সালের জুনে যা ছিল ৯০ হাজার। এখনও কমার এ ধারা অব্যহত আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment