গণতন্ত্র, বিরোধী দল এবং সড়ক নৈরাজ্য

দেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-বিতর্ক চলছে। একপক্ষ মনে করছেন দেশে পর্যাপ্ত গণতন্ত্র আছে। তাছাড়া উন্নয়ন বেশি হলে গণতন্ত্র একটু কম হলেও ক্ষতি নেই বলে মনে করার মতো লোকও দেশে আছেন। অন্যদিকে অনেকেই আছেন যারা দেশে গণতন্ত্র নেই বলে মনে করছেন। তারা মনে করেন বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করে, বিতর্কিত করে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

এই যে নানা ধরনের মতামত প্রকাশ পাচ্ছে, গণমাধ্যমে সেগুলো প্রচার হচ্ছে তা থেকে কিন্তু গণতন্ত্রহীনতার প্রমাণ পাওয়া যায় না। মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা সঙ্কুচিত হলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুব বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মতামত প্রকাশ ও প্রচার হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিও অবাধে প্রচার হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে তারা যেসব কথা বলছেন সেগুলো প্রচারেও বাধা দেয়ার কথা শোনা যায় না।

তবে শুধু ভোটের গণতন্ত্রের আবশ্যকতা, কার্যকারিতা, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে চলাই প্রকৃত গণতন্ত্র কিনা সে প্রশ্নও সামনে আসছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কোন পথে বা কোন ধারায় অগ্রসর হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধাসমূহ কীভাবে দূর করা যাবে সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়া দরকার। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য গঠনমূলক আলোচনায় আন্তরিক ও দ্বিধাহীনভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ সচেতন সব নাগরিকই এক্ষেত্রে ভূমিকা ও অবদান রাখতে পারেন।

২) বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, বিশে^র সব গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল রয়েছে। বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র সম্পূর্ণ হয় না। পরিপূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দল দরকার। বর্তমান সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন,‘বিরোধী দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিন। না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকবে না।’

ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কেন মনে হলো যে, দেশে বিরোধী দল নেই? আমাদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। নিবন্ধনহীন দলের সংখ্যা শ’খানেক কিংবা তারও বেশি। আওয়ামী লীগ ছাড়া এবার আর কোনো দলকে সরকারি দল বলা যাবে না। কারণ আওয়ামী লীগ এবার তার নির্বাচনী মিত্রদেরও বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছে। এখন ডা. চৌধুরী যদি মনে করেন তারা সরকারি দল এবং একমাত্র বিএনপিই বিরোধী দল, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু ডা. চৌধুরীর বক্তব্য সত্য বলে ধরে নিলেও প্রশ্ন আসে, সরকার কি বিএনপিকে রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছে না? বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র যেমন সম্পূর্ণ হয় না, তেমনি সরকারি সুযোগ বা অনুমতি নিয়েও বিরোধী দলের রাজনীতি করা যায় না। বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে এখন বেকায়দায় আছে। এটা তাদের ভুল রাজনৈতিক নীতি ও কৌশলের ফল। সন্ত্রাস-সহিংসতার পথ ছেড়ে বিএনপি যদি নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে চলে তাহলে তাদের আর সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হবে না।

৩)ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন,‘মেধাবী ছাত্র আবরারের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের সবার। পুলিশ, বিআরটিএসহ সরকারি সংস্থাগুলো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারে না।’

ব্যর্থতা স্বীকার করলেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না। আমাদের দেশে সড়ক ও গণপরিবহনে যে নৈরাজ্য চলছে, মানুষ হত্যার যে উৎসব চলছে তার কারণ আমরা জানি। কিন্তু কারণগুলো দূর করার কোনো উদ্যোগ নেই না। পুলিশ কমিশনার নিজেই যেহেতু ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সেহেতু আমরা এখন পরিবর্তনের আশা করবো। ভুল বুঝতে পারাটাই বড় কথা নয়, বড় কথা হলো ভুলের পুররাবৃত্তি রোধ করতে পারা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment