হজরত ইমাম মাহ্দী ও ঈসা (আ:)-এর শুভ আগমন

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বে তিনটি দূর্ভিক্ষের বৎসর আসবে। উহাতে মানুষকে দুঃসহ অনাহার ও অনশন ভোগ করতে হবে। প্রথম বৎসর আল্লাহর আদেশে এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টির বর্ষণ এবং পৃথিবী এক তৃতীয়াংশ শস্যাদির উৎপাদন বন্ধ করে দিবে। দ্বিতীয় বৎসর দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টির বর্ষন কমে যাবে ও উৎপাদন দুই তৃতীয়াংশ কম হবে। তৃতীয় বৎসর আল্লাহর আদেশে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিবে। উহা হতে এক বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষিত হবে না। সেই বৎসর আল্লাহর আদেশে পৃথিবী শস্যাদির উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিবে। উহা হতে কোনো সবুজ উদ্ভিদই উৎপন্ন হবে না। ফলে আল্লাহ যে পশুকে (জীবিত রাখতে) চাইবেন, তা ব্যতীত সকল তৃণভোজী পশুই ধ্বংস হয়ে যাবে।

উপরের হাদীস অনুযায়ী, ২০২৬ সালে যদি ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটে, তবে প্রক্রিয়াটা শুরু হবে আরো তিন বছর আগে থেকে অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে। কারণ, ২০২৩ সালে আকাশ হতে বৃষ্টিপাত তিনভাগের একভাগ কমে যাবে। ২০২৪ সালে বৃষ্টিপাত তিনভাগের দুইভাগ কমে যাবে। ফলে পৃথিবীতে ফসল উৎপাদন কম হবে। মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তু ব্যাপকহারে মারা যেতে থাকবে। ২০২৫ সালে হাদীস অনুযায়ী কোন বৃষ্টিপাত হবে না। ফলে মানুষ এবং জীবজন্তু কঠিন অবস্থায় মধ্যে পড়ে যাবে। সেই বছরই দাজ্জালের লোহার শিকল খুলে দেয়া হবে এবং সে সারা পৃথিবীতে বিচরণ করবে এবং মানুষের সামনে এসে ঈমান হরণ করে নিবে। যেহেতু পর পর তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে পৃথিবীর মানুষ ও জীবজন্তু চরম খাদ্যভাবে পড়ে যাবে। তাই হাদীসে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখার কথা বলা হয়েছে। মানুষ খাদ্য ও পানির অভাবে যখন ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা তখন দাজ্জাল তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এবং খাদ্যের ভান্ডার নিয়ে সুমধুর সুরে গান করতে করতে বিভিন্ন শহরে বন্দরে যাবে। গান পাগলা মানুষ মধুর বাদ্যযন্ত্র শুনে বলতে থাকবে, এই সুমধুর আওয়াজ কোথা থেকে আসছে। বিভ্রান্ত মানুষগুলো দলে দলে দাজ্জালের সামনে এসে হাজির হবে। দাজ্জাল ক্ষুুধার্ত মানুষগুলোকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করবে, মানুষ খাদ্য ও পানি পান করে তৃপ্ত হবে। দাজ্জাল তখন বলবে, আমি তোমাদেরকে খাদ্য ও পানি দান করেছি ও শান্তি দিয়েছি, আমি কি তোমাদের প্রভু নহি? বিভ্রান্ত মানুষ তখন সমস্বরে বলবে, হ্যাঁ, তুমিই তো আমাদের প্রভু, তুমি না আসলে আমরা এ অবস্থা হতে বাঁচতে পারতাম না। এভাবে তারা দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে ঈমান হারাবে।

সারা পৃথিবীতে যখন দাজ্জালের ফেতনা চলতে থাকবে এবং দাজ্জালের ফেতনায় পড়ে মানুষ ঈমান হারিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। এইভাবে পৃথিবীর তিন ভাগের দুইভাগ মানুষ মারা যাবে। দুইভাবে মানুষ মারা যাবে। একটা হল Red Death অন্যটা হল White Death. Red Death অর্থাৎ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে রক্তপাতের ফলে মানুষ মারা যাবে। আর ডযরঃব উবধঃয হল বিভিন্ন ধরনের মহামারীতে ব্যাপক হারে মানুষ মারা যাবে। বর্তমান চলছে ২০১৮ সাল। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এটা হচ্ছে আখেরী জামানা অর্থাৎ শেষ জামানা। এখন যতই বছর যাবে ততই পৃথিবীর মানুষের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাবে। এই জমানার শেষের দিকে ভয়ংকর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। এটা হবে ঘঁপষবধৎ ডধৎ।

বর্তমানে পৃথিবীতে ১৫ হাজার নিউক্লিয়ার বোমা মজুত আছে। তার মধ্যে রাশিয়ার কাছে আছে ৭ হাজার ও আমেরিকায় আছে ৭ হাজার এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আরও ১ হাজার আছে। এক একটা বোমায় বড় বড় শহরের কোটি কোটি মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় যে বোমাটি পড়েছিল, তাতে ৬০ হাজার লোক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যায়। বর্তমানের বোমাগুলি ঔ বোমার চেয়ে ১ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। ২০২৬ সালে যদি ইমাম মাহ্দী আসেন তাহলে নিউক্লিয়ার যুদ্ধটা শুরু হবে আরো আগে থেকে। কারণ উপরের হাদীস থেকে জানা যায় যে, এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ইমাম মাহ্দী আসবেন। দাজ্জাল বের হবে, দাজ্জাল সারা পৃথিবী ব্যাপী ফিতনা সৃষ্টি করবে। দাজ্জাল কয়েক বছর অবস্থান করবে। পৃথিবীতে দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহ চলতে থাকবে আর দাজ্জালের ফিতনা চলতে থাকবে। ফলে দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে এবং যুদ্ধবিগ্রহে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে। কেউ কারও নিয়ন্ত্রনে থাকবে না। কোন দেশ আরেক দেশের কথা শুনবে না। প্রত্যেক দেশ নিজ নিজ ক্ষমতা প্রদর্শন করবে। এই ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো নিউক্লিয়ার বোমা। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানকে কোন মতে হারানো যাচ্ছিল না। তখন আমেরিকা জাপানের হিরোশিমায় পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার বোমাটি নিক্ষেপ করে। সাথে সাথে ৬০ হাজার লোক মারা যায়। এই বোমার রেডিয়েশনে দুই বছরের মধ্যে ১ লক্ষ লোক মারা যায়। এত প্রচন্ড শক্তি ছিল এই একটি বোমাতে। (চলবে)

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment