ফের বাড়ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ আবার বাড়ছে। বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শক কাজের ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধিজনিত কারণে এবার খরচ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চুক্তিমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত ধরা হয়েছে শতকরা ১.৪১ থেকে ৮.৩০ শতাংশ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ৬৮৫ কোটি ৮৯ লাখ ২ হাজার ১৯০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে। পদ্মা সেতু প্রকল্প কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেতু বিভাগে।

এ নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ভ্যাট ও আয়কর বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধিজনিত কারণে চুক্তিমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ লাগতে পারে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতুতে ১৪তম স্প্যান বসানো হয়েছে গতকাল শনিবার। এদিন ১৪তম স্প্যান বসানোর পরই পদ্মা সেতু এখন ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের ১ জুলাই। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭০ ভাগ।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এর পর খরচ ধরা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ। নদীশাসন করছে সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্ত নির্মাণকাজে। নতুন করে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ বাড়ছে প্রায় পৌনে ৭শ কোটি টাকা। এ নিয়ে চতুর্থবার পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়ছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সম্প্রতি বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের স্বার্থে ঠিকাদার ও পরামর্শকের কাজের বিল বর্ধিত হারে পরিশোধ করতে হবে। তবে সেতু বিভাগ সূত্রমতে, নতুন করে ডিপিপি সংশোধন আপাতত না-ও হতে পারে। আর প্রকল্প কার্যালয়ের যুক্তিমতে, ভ্যাট ও আয়করের হার চুক্তি বাস্তবায়নকালে বাড়লে চুক্তিমূল্য সংশোধনের জন্য মূল অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হবে না। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি ও সিপিটিইউর এ রকম একটি সিদ্ধান্ত বলা আছে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২.৯৭ শতাংশ হারে খরচ বৃদ্ধির কারণে বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪ হাজার ৬৯৯ টাকা ৬৩ টাকা। এতে খরচ বাড়ল ৩৬০ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৯ টাকা। নদীশাসন কাজের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এ প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে নদীশাসন কাজ।

এ ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকার। বর্ধিত চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৯৭২ কোটি ৩৮ লাখ ২৪ হাজার ৫২৮। ৩.০৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮১ টাকা। বিদেশি ঠিকাদারের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়কর ১০.৫০ শতাংশের পরিবর্তে ১৪.৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে। ঠিকাদারের বাইরে পরামর্শক বাবদ ভ্যাট ও আয়কর ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ।

এ কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ছিল ৫৬২ কোটি ৪৪ লাখ ৫ হাজার ৫৭৩ টাকা। ৮.৩০ শতাংশ হারে বেড়ে এখন ধরা হচ্ছে ৬০৯ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ টাকা। তার মানে ৪৬ কোটি ৭০ লাখ ৬৪ হাজার ৯১ টাকা বেড়েছে। বিদেশি আরেক পরামর্শক ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালটেন্সি (এমএসসি) রেনডেল লিমিটেড, ইউকে এর চুক্তিমূল্য ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬০ টাকা। ৮.১৯ শতাংশ হারে বেড়েছে ১৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৪১ টাকা। এতে বর্ধিত চুক্তিমূল্য ধরা হচ্ছে ১৮২ কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

আর দেশি পরামর্শকের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়কর ২৫ ভাগের স্থলে ২৭ ভাগ ধরা হয়েছে। দেশি পরামর্শক কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-ইএসডিও-আইএলআরপি অ্যান্ড আইআরএপির বর্তমান চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার ১৭৬ টাকা। ১.৪১ শতাংশ হারে এখন বেড়েছে ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৮৯ টাকা। বর্ধিত চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৫ টাকা। আরেক দেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের চুক্তিমূল্য ৬ কোটি ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকা। ১.৪৬ শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৮ টাকা।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি হলো-এখন পর্যন্ত সেতুর জাজিরা প্রান্তে নয়টি, মাওয়া প্রান্তে একটি অস্থায়ী, তিনটি স্থায়ী ও নদীর মধ্যে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। নদীর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে ১৪তম স্প্যানটি গতকাল বিকালে ৪টার দিকে বসানো হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন