দেশেই লিভার প্রতিস্থাপন, প্রথম রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) লিভার প্রতিস্থাপন হওয়া প্রথম রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। লিভার প্রতিস্থাপনের ১৪তম দিন শনিবার তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন।

তিনি এবং তাকে যিনি লিভার দান করেছেন- দু’জনই সুস্থ আছেন। স্বাভাবিক আছে লিভার প্রতিস্থাপনকৃত রোগীর রক্তচাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস। মুখে স্বাভাবিকভাবে খাবারও খাচ্ছেন। প্রতিস্থাপিত লিভার কাজ করতে শুরু করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে ৪-৬ সপ্তাহ লাগবে।

বিএসএমএমইউ’র মিল্টন হলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত এই অপারেশনের খোঁজ নিয়েছেন। তিনি আমাদের পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের দিকে বেশি নজর দিতে বলেছেন। কেননা কারিগরি দিকে আমরা সফল।

তাই এই অপারেশনের পর একবারও আমি রোগীর কাছে যাইনি, যাতে রোগ জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে। আমরা আরও ৪-৫ জন রোগীকে বিনামূল্যে লিভার প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার পরই ঘোষণা করব এখানে লিভার প্রতিস্থাপন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে সিরাতুল ইসলাম শুভর লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য সিরাতুল ভারতে যান।

সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার মতপ্রকাশ করেন। ২০ বছর এই যুবকের ৪৯ বছর বয়সী মা ছেলেকে আংশিক লিভার দানে সম্মত হন। চলতি বছরের ১৫ জুন সিরাতুলকে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খানের অধীনে ভর্তি করা হয়।

২৪ জুন মায়ের লিভারের আংশিক সংগ্রহ করে তার ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন শুরু করা হয়। প্রতিস্থাপন শুরু হয় ভোর ৬টা থেকে। রোগীর লিভার সম্পূর্ণ ফেলে দিয়ে দাতার লিভারের অংশ সফলভাবে প্রতিস্থাপিত করতে ৫০ সদস্যের চিকিৎসক দল টানা ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। বর্তমানে প্রতিস্থাপনকৃত লিভার কাজ করতে শুরু করেছে। দাতা ও গ্রহীতা দু’জনেই সুস্থ আছেন। এই অপারেশনে মোট ২০ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো জটিল এ লিভার প্রতিস্থাপনের নেতৃত্বে ছিলেন হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান।

শল্য চিকিৎসক দলে আরও ছিলেন অধ্যাপক মোহছেন চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক সাইফ উদ্দিন এবং সহকারী অধ্যাপক নূর-ই-এলাহী। জটিল অপারেশন সম্পন্নের সময় রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া প্রদান করেন অ্যানেসথেসিয়া এনালজেসিয়া ও ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল হাই, ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ডা. সাবিনা ইয়াসমিন, ডা. মন্তোষ কুমার মণ্ডল, ডা. সঞ্জয় কুমার সাহা, ডা. মোস্তফা কামাল।

অপারেশন চলাকালীন ইমেজিং সংক্রান্ত সহযোগিতা করেন রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমএইচ মোস্তফা কামাল ও রেসিডেন্ট দীপক ভার্মা। চিকিৎসক টিমকে সার্বিক সহায়তা করেন ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. পি বালাচন্দ্র মেনন ও তার ৪ সদস্যের দল।

এছাড়া ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমে নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ডবয়সহ সহায়ক ভূমিকা রাখেন ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, নিউরোসার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগসহ অন্য বিভাগের চিকিৎসকরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন