কাল বাদে পরশু কারবানি ঈদ, হাট ভর্তি গরু ছাগল ক্রেতা নেই

 রাজশাহী ব্যুরো ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না)

কাল বাদে পরশু কোরবানি ঈদ। কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসায় রাজশাহীতে হাট জমে উঠলেও ক্রেতা নেই। ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও হাটে কেনাবেচা তুলনামূলক ভবে খবই কম। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার হাটে গবাদি পশুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। রাজশাহীর মহানগরীর সিটিহাট, নওহাটা, দামকুড়া, কাঁটাখালী হাট রয়েছে। এছাড়াও পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাট, গোদাগাড়ীর, কাঁকনহাট ও মহিষালবাড়ি হাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুরহাট, মোহনপুরের কেশরহাট ও সাপাইহাট, তানোরের মু-ুমালা হাট উল্লেখযোগ্য। ক্রেতা-বিক্রেতাত উভয় মিলে মুখরিত হয়ে আছে এসব হাটগুলি। রাজশাহীর নগরীর সিটিহাটের দেখাশোনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা প্রশাসন। আর বিভিন্ন উপজেলার হাটগুলো দেখাশোনা করছে জেলা প্রশাসন। রাজশাহীর কয়েকটি কোরবানির হাট সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সাইজের গরু, মহিষ, ছাগল রয়েছে। বেশিরভাগ রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে এসেছে পশুগুলো। হাটে যারা গরু নিয়ে এসেছেন তাদের অধিকাংশই বাড়িতে গরু লালন-পালন করা। এসব খামারিরা বাড়িতে গরু পালন করেন যা কোরবানির ঈদকে ঘিরে হাটে বিক্রি করেন। স্থানীয় খামারিদের পাশাপাশি ব্যাপারিরা কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানি পশু নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য। এ বছর ভারতীয় গরু উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় না আসায় হাটগুলোতে দেশি গরুর চড়া দাম বলছেন খামারিরা। গরু বিক্রি করে বেশি লাভ হলে আগামীতে পশু পালনের আগ্রহ আরও বাড়বে। এতে করে দেশীয় খামার গড়ে উঠলে গরুর জন্য ভারতের প্রতি নির্ভরশীলতা কমবে, বন্ধ হবে সীমান্তে অনাকাঙ্খিত প্রাণহানী ঘটনা। এমনই বলছিলেন গরু বিক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ গতবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম অনেক বেশি। রাজশাহীর বিভিন্ন পশু হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, ছোট সাইজের গরুর দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরু ৭০ থেকে ৮৫ হাজার ও বড় সাইজের গরু ৯০ থেকে এ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত দাম হাকানো হচ্ছে। ছোট ছাগলের দাম ৮ থেকে ১০ হাজার, মাঝারি সাইজের দাম ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার ও বড় সাইজের ছাগলের দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বলা হচ্ছে। নওগাঁর মান্দা থেকে রাজশাহীর সিটি হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন অব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, রাজশাহীর হাটগুলোতে তুলনামূলক ভাবে ভারতীয় গরু আসেনি। এরপর বছরব্যাপী ধানের গুড়া, ভুষি, নালিসহ বিভিন্ন উপাদান ক্রয় এবং শ্রমিক দিয়ে গরুর পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। তাই লাভের আশায় দাম বেশী চাওয়া হচ্ছে। রাজশাহীর সিটিহাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল মালেক নামের এক ব্যক্তি বলেন, হাটে দেশি গরুর কদর বেশি। তাই দামও চড়া। বিক্রেতারা দামে ছাড় দিচ্ছে না। তিন থেকে চার মণ গরুর দাম লাখ টাকা উপরে চাওয়া হচ্ছে। হাটে বড় গরুর চাহিদা কম। অনেকই আবার তিনজন মিলে কোরবানি দেবেন তারা ছোট গরু কিনছেন। গরু আমদানি না হলে দাম কমবে না। মনিরুল ইসলাম নামে সিটি হাটে ৮টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, কোরবানির পশু ক্রেতারা ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা মণ আকারের গরু কিনছেন। দামে পড়তা না হওয়ায় অনেকে নিচ্ছে না। কোরবানির আরও কয়েকদিন সময় থাকায় ক্রেতার পশুগুলি পর্যবেক্ষণ করছেন। আবার দামে পড়তা হলে কেউ কেউ কিনে নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষের পশু রাখার মত জায়গা নেই। তারা ঈদের দুই- একদিন আগে কোরবানির পশু কিনবেন। এছাড়া অনেকেই গৃহস্থবাড়ির পশু কিনছে। যেনো ঈদের আগের দিন নিয়ে গিয়ে কোরবানি দিতে পারেন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা অন্তিম কুমার সরকার জানান রাজশাহীতে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮২৪ টি। এরমধ্যে গরু ৫৮ হাজার ৬১৩ টি, ছাগল ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ টি, ভেড়া ১২ হাজার ৫শ’ ও মহিশ ২ হাজার। এখানে পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৬ হাজার ৭৫০টি। ফলে এখানে কোরবানির জন্য বাইরের পশুর প্রয়োজন হবেনা। গতবছর এখানে ৩ লাখের কিছু কম পশু কোরবানি হয়েছে। এবারও এখানে স্থানীয় খামারের পশু দিয়েই তা করা যাবে বলে জানান তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন