মানবসৃষ্ট কারণে সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি যে মনুষ্য-সৃষ্ট নানা কারণে আমাদের সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।

তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল নিঃসরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা দূষণ, শব্দ দূষণ ও সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন এসবের অন্যতম কারণ। এর ফলে সাগর/মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল শাহবাগে ইন্টারকন্টিনেন্টালে তৃতীয় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের ‘সুনীল অর্থনীতি সম্মেলন’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বেশিরভাগ আইওআরএ (IORA) সদস্যভুক্ত দেশগুলো সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারাও আক্রান্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে এবং মানবজাতিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় সবাই মিলে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাগর ও মহাসাগর গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই শোষণ করে। Marine Ecology (সমুদ্র বাস্তুতন্ত্র) ধ্বংস হলে মানবজাতির অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিসত্বর সবাই মিলে এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

সমুদ্রকেন্দ্রিক অপরাধ ও দূষণ বিষয়ে সবাইকে সর্তক হওয়ার পাশাপাশি এসব বন্ধে সব দেশকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, মহাসাগর ও তার বিপুল সম্পদ সংরক্ষণে আমরা যত বেশি বিনিয়োগ করবো, যত বেশি পদক্ষেপ নেবো তা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।

ক্ষতিকর উপায়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের নেওয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমুদ্রের জৈবসম্পদ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার মৎস্য আহরণের সব ধরনের ক্ষতিকারক পদ্ধতি ও উপায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং অন্যান্য অপরাধ দমনেও কার্যকর আইন প্রণয়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়। তাই আমাদের সুনীল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সুনীল চিন্তাও করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সে লক্ষ্যে সমন্বিত, লাভজনক ও সর্বোপরি সমুদ্র সংরক্ষণমূলক নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোট আইওআরএর তৃতীয় এ আঞ্চলিক সম্মেলনের সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিট। এটি ঢাকায় গত বছরের ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের পর মন্ত্রীপর্যায়ের দ্বিতীয় বড় আয়োজন। এতে ২২ সদস্য রাষ্ট্র এবং ৯টি ডায়ালগ পার্টনারসহ মোট ৩১ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন