দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে রোহিঙ্গারা

তৌহিদুল ইসলাম বারেক, কক্সবাজার।

দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাহলে কি দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষল বাংলাদেশ?

মাত্র দুই বছরের মাথায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করেছে। এতোদিন তারা স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ছিলেন। এবার তারা সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে। গত এক মাসে এরকম হুমকির বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। ভিডিওগুলো রোহিঙ্গা ভিত্তিক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ভিডিও’র সবগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এসব ভিডিওর মধ্যে অশনি সংকেত দেখছেন সচেতন মহল।

সচেতন লোকজন বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ যে মানবিকতা দেখিয়েছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু ‘অকৃতজ্ঞ’ রোহিঙ্গারা তা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ভুলে গেছে। তারা এখন মায়ানমার নয়; বাংলাদেশকে নানা অপবাদ দিচ্ছে। সর্বশেষ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তার প্রমাণ মিলেছে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি খারাপ বলেছে ওই ভিডিও বার্তা দাতা।

২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট পালিয়ে আসার পর ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রিত রয়েছে। প্রথম দিকে তারা অসহায় অবস্থায় থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এনজিওদের সহায়তায় তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে। এতেই ‘আত্মবিশ্বাসী’ হয়ে উঠে স্থানীয়দের উপর চড়াও হতে শুরু করে। এভাবে ২০১৬ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের হাতে স্থানীয়রা নির্যাতিত হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তা আরো বেড়ে চলে। এভাবে আরো বাড়তে থাকে তাদের দৌরাত্ম্য। গড়ে উঠে বিভিন্ন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রæপ। এসব সন্ত্রাসী গ্রæপের হাতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোকজন হতাহত হয়েছে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন হ্নীলার যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক। এই ঘটনা চরম ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা। তারা বাংলাদেশে থেকে যেতে অনড় অবস্থান নেয়ায় প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা অত্যন্ত খারাপভাবে দেখছে তারা। অন্যান্য ইস্যু থাকলেও প্রত্যাবাসনকে ঘিরেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের প্রতি চূড়ান্ত নাখোশ হচ্ছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঘিরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে রোহিঙ্গারা নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এই নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও হুমকির বার্তা দিচ্ছে। ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এসব হুমকির ভিডিও প্রকাশ করছে। যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ভারতের হায়দারাবাদ থেকে এক রোহিঙ্গা ফেসবুক লাইভে গিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে। ওই ভিডিও বার্তা একটি রোহিঙ্গা ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হলে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে ওমর ফারুক হত্যার ঘটনা নিয়ে চরম মিথ্যাচার করেছে ওই রোহিঙ্গা। ওই ব্যক্তি ভিডিওতে দাবি করেছেন, স্থানীয় লোকজনই ওমর ফারুককে মেরেছে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ভয়ংকর মিথ্যা বার্তাও দেয়া হয় ভিডিওটিতে। সেই সাথে বাংলাদেশের স্থানীয় লোকজন ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাও করা হয়। সর্বশেষ শুক্রবার থেকে রোহিঙ্গা কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী ও হুমকিমূলক একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ডিবিসি টিভি চ্যানেলের প্রকাশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদনের শব্দ মুছে সেখানে উল্টো ভাষ্য যোগ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ভাষার ওই ভাষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে বিষোদগার করা হয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চরম অপবাদ দেয়া হয়েছে।

ভিডিওতে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে টাকা নেয়ার জন্যই বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। অনেক টাকা কামিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ভিডিটিতে। টাকা আর পাচ্ছে না বলে এবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। এই নিয়ে ‘জোর’ করায় বাংলাদেশকে মিয়ানামারের চেয়ে খারাপ বলা হয়েছে। এই ভিডিওটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা চলছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এনজিওদের প্রশ্রয় ও প্ররোচনা পেয়ে রোহিঙ্গারা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তারা এখন নিজেদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের লাগাম টানতে যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হয় হবে একদিন নিশ্চিত তারা ভয়ংকর হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দুই বছর না যেতেই রোহিঙ্গা যে অবস্থা শুরু করেছে তাতে অনেক ভয় লাগছে। তাদের ফেরত পাঠাতে না পারলে একদিন আমাদের ফিলিস্তিন-ইসরাঈল দশা হবে। তাই যেকোনো চেষ্টায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতেই হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন