ছড়িয়ে পড়েছে রোটা ভাইরাস, বেড়েছে ডায়রিয়া

গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেকে বসেছে শীত। শৈতপ্রবাহের কারণে সারাদেশেই তাপমাত্রা কমেছে। এতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে নিউমেনিয়া, সর্দিজ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রোটা ভাইরাস। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

সারাদেশের মতো রাজধানীতেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রাজধানীতে শীতের প্রকোপে ডায়রিয়ায় আক্রাান্ত হচ্ছে শিশুরা। রোটা ভাইরাস সক্রিয় হওয়ার কারণে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ বাংলাদেশ আইসিডিডিআরবিতে।

অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে প্রতিষ্ঠানটিকে। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআরবিতে সরেজমিন দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগীদের উপছে পড়া ভীড়। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবিতে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫৫০ থেকে ৬০০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু। শৈতপ্রবাহে শীত বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি’র চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে। শীতের কারণে শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দিচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হচ্ছে। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ২ বছরের কম বয়সীরা আরও বেশি ঝুঁকিতে।

তাই শিশু কি খাচ্ছে, মুখে আঙুল দিচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখতে আর বাইরে থেকে কেনা খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে যায়। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। তবে শিশুরা যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মারাও যেতে পারে। এ কারণে ডায়রিয়া দেখা দিলে শিশুদের বেশি বেশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটি বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এদিকে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতেও প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এরমধ্যে নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। তাই বাড়তি চাপ পড়লেও কোন সমস্যা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে চারটি ওয়ার্ডে ৩০টি রুম হিটার লাগানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২০ লাখ। আর মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে আটজনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী প্রধান চারটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রোটা ভাইরাস।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ডায়রিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক রোটা ভাইরাস। এখন যে ডায়রিয়ার প্রকোপ চলছে সেটার বেশির ভাগই এই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনো পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসা নেই। তবে স্যালাইনসহ আরো কিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাপনা আছে। সেগুলো ভালোভাবেই চলছে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে আমরা এখনো জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে রোটা ভাইরাসের টিকা চালু করতে পারিনি আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অভাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন