ক্রমেই জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ

আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন রায় মিয়ানমার অস্বীকার করার পর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায় মানতে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘকেও হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে। তবে চীন রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এখনো মিয়ানমারের পক্ষে থাকায় সেখানেও আশার আলো দেখছেন না নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আর রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত না করা পর্যন্ত সংকট সমাধান হবে না।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতা চালিয়ে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আর ২০১৭ সালে চলমান সেই সহিংসতা গণহত্যায় রূপ ধারণ করে। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। বিষয়টি তখন থেকেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিতে আনতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। একপর্যায়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডের আইসিজে সদরদফতরে শুরু হয় মামলার শুনানি। মাত্র দেড় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তীকালীন রায় দেয় আইসিজে। এতে চলমান গণহত্যা বন্ধ, দোষীদের বিচার, গণহত্যার আলামত সংরক্ষণ ও চার মাস পর পর বর্তমান অবস্থা জানাতে মিয়ানমারকে নির্দেশনা দেয় জাতিসংঘের এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু রায়ের একদিন পরই তা অস্বীকার করে বিবৃতি দেয় মিয়ানমার সরকার। আর এতেই সংকট আরও ঘনীভূত হবার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও প্রত্যাবাসন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আবু নোমান বলেন, আইসিজের পক্ষ থেকে রায় দিলেও তা তদারকি করতে কোন কমিটি গঠন করে দেয়নি। ফলে মিয়ানমার আদৌ এই রায় মানছে কিনা তা জানা কঠিন হবে। এছাড়া রায়ের একদিন পর মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়ায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে রায়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি তারা।

এই বাস্তবতায় রায় মানতে প্রয়োজনে জাতিসংঘকেও হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো পক্ষে থাকায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কেও উপেক্ষা করার সাহস দেখাচ্ছে মিয়ানমার। তাই চূড়ান্ত রায় আসার আগে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে বন্ধু শূন্য করতে কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের সংগঠন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ফর ডেভলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কলিম পূর্বপশ্চিমকে জানান, এতদিন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার কোনকিছুতেই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই আগামীতে চীন ও রাশিয়াকে পক্ষে টানতে যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে তাতে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অংগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে সফলতা আসবে বলেও জানান তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন