স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মুক্তিযুদ্ধা স্বীকৃতি পায়নি বাঘা

আর কত অপক্ষোর প্রহর গুণতে হবে বাঘার। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত যখন তার সহযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধা স্বীকৃতিসহ সম্মান পেলেও তিনি রয়েছেন বিরত। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও যখন একের পর এক মুক্তিযুদ্ধারা যখন নতুনভাবে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। ঠিক তখনও তিনি কোন কারণে বিরত তা জানা নেই বাঘার।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যতটুকু প্রমাণ থাকলে একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার সম্পূর্ণটাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

চোখের সামনে দিয়ে সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার আরও ৮জন মুক্তিযুদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন অথছ ১৯৭১সালে রণাঙ্গনে পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনীদের মুর্তিমান আতংক ছিল বাঘা বার বার হচ্ছেন বিরত। ফলে বাঘার প্রশ্ন আমি কি বেচেঁ থাকতে আমার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাব না।

পুরু নাম নুর ইসলাম নুরুল (সবার কাছে পরিচিত নাম বাঘা)। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরনগর গ্রামের মৃত জবেদ আলী মড়লে সন্তান। এই বাঘা নামেই তাহিরপুর উপজেলার সকল স্থরের মানুষজন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ও সহযুদ্ধাদের মুখে মুখে। সবাই জানেন চিনেন কিন্তু মিলেনি তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও প্রাপ্য সম্মান টুকুও। এনিয়ে সবার মাঝে চাপা ক্ষোব বিরাজ করছে।

জানা যায়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র নং বা, সু, স/০০০৩৩/০০১২৫/২০১৬, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়া স্বাক্ষরিত স্মারক নং ০৫.৪৬.৯০৯২.০০০.০৬.০৫৫.১৯ উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির ০৫.০২.১৭ইং তারিখে স্বাক্ষরিত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ০৮,০২,১৭, জেলা প্রশাসক-আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত (১৪,০৮,১৯ তারিখ) স্মারক নম্বর ০৫.৪৬.৯০০০.১৫.০২.০১০.১৬.৬৯৫ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয় স্থানীয় সৃনামগঞ্জ ১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ডিও নং সুনাম-১/ মুবিন/০১৮/০১৪৪/১৯, স্মারক নং সসক/সুনাম-১/০১৮/০০১/১৯,তারিখ,২৬,১১,১৯ইং,সুপারিশ ও প্রয়োজনীয় প্রমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আবেদনের কপি আ.ক.ম মোজ্জাম্মেল হক এমপির অনলাইনে প্রকাশের জন্য আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করেন ২০,১১,১৯ইং এবং উপজেলার সাতজন বীর মুক্তিযুদ্ধার প্রত্যায়ন পত্রসহ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবং তা সেখানে সংরক্ষিত আছে।

আর কি করলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবে নুর ইসলাম নুরুল ওরফে বাঘা।

যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা ও কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধা আব্দুস শহিদ, রফিকুল ইসলামসহ অনেক মুক্তিযুদ্ধাই জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নুর ইসলাম নুরুল ওরফে বাঘা আমাদের একজন সহযোদ্ধা। এক সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধে তার কৃতিত্বের জন্য তার তাকে সবাই বাঘা বলে ডাকতাম। র্দীঘদিন এলাকায় না থাকায় তার নামটি তালিকাভূক্ত করা হয় নি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তার মত একজন মুক্তিযুদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া জন্য জোরালো দাবি জানাই।

নুর ইসলাম নুরুল অরফে বাঘা-ক্ষোবের সাথে জানান, ১৯৭১সালে দেশ মাতৃকার টানে ৭মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ভাষণ শোনার পর নানান বাঁধা পায়ে ঠেলে মৃত্যু নিশ্চিত যেনেও যুদ্ধে চলে যাই। আমার যৌবনের সবটুকু দিয়ে যুদ্ধ করেছি স্বাধীনতার জন্য। তখন জীবনের মায়া ছিল আমার কাছে নগন্য আজ আমি সবার কাছে নগন্য হয়ে পড়েছি।

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত না হলেও এখন জীবন যুদ্ধে আমি পরাজিত। সবাই স্বীকৃতি পেলেও বার বার সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় এমপির সুপারিশ ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরও আমি আমার স্বীকৃতি পাচ্ছি না। এর জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম। এই বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু দৃষ্টি কামনা করছি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে জীবন সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে যান যুদ্ধে। ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে ট্যাকেঘাটসহ বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ করেন। রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনীদের মুর্তিমান আতংকের নাম ছিল বাঘা। নুর ইসলাম নুরুল ওরফে বাঘা যুদ্ধের সময় বাঘের মত শত্রুর বিরোদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তেন। প্রতিটি সম্মুখ যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করতে সবার সম্মুখে থেকে সাহস দিয়ে আক্রমণ করে ঘায়েল করায় ছিল বাঘা। যুদ্ধে তার মত সাহস আর শক্তির জন্য সহযোদ্ধারা তাকে বাঘা উপাধি দিয়েছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন