ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ মাছ-মিষ্টি!

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গাবতলী উপজেলা জুড়ে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ব্যবসায়ীরা বিশাল আকৃতির মাছ, আর বড় বড় মিষ্টি নিয়ে এসেছে ঐতিহ্যবাহী মেলায়। লাখ মানুষের মেলায় লাখ টাকায় বিক্রি হলো বাঘাইড় মাছ।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় ৭৩ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ ১৮০০ টাকা কেজি দরে দাম হাঁকানো হলো। একটি ১৪ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টির দাম হাঁকানো হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বিশাল আকৃতির মাছ, কাঠের আসবাবপত্র, গৃহস্থালি দ্রব্য আর বড় বড় মিষ্টি কেনাবেচার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রায় দুই শতাধিক বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মেলাটিকে ৭ উপজেলার মানুষের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ।

এবারের এ মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ এনেছেন স্থানীয় মহিষাবান গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব। তিনি জানান, যমুনা নদী থেকে ধরা ৭৩ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ সকালে ১৮ শ টাকা কেজি দরে তিনি ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা মাছটির দাম হাঁকিয়েছিলেন। তবে পুরো মাছ কেউ ক্রয় না করায় বেলা ১২ টার দিকে মাছটি কেটে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ১৫ শ থেকে ১৬ শ টাকা কেজি দরে।

শফিকুল ইসলাম, মিনার, শাহিন, জিহাদ ইসলাম, দেলবরসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা জানান, এ মেলায় গাঙচিল, চিতল, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

এসব মাছ প্রায় ৫-২০ কেজি পর্যন্ত রয়েছে। মাছ বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি গাঙচিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিতল ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬শত টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, রুই ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কাতলা ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, হাঙড়ি ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, গ্রাসকার্প ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভার কার্প ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বিগহেড ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা।এছাড়াও মেলায় রয়েছে সার্কাস, ভয়ংকর হোন্ডা খেলা, নাগরদোলা, চড়কী, নৌকা, ফুসকার দোকানসহ নানা ধরণের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। মেলায় বেড়াতে আসা গোবিন্দগঞ্জ এলাকার সুমাইয়া, পিয়াসা, ববি, রবিন, শেখর, বাবুলরা জানায়, তারা প্রতিবছর আত্মীয়ের বাড়িতে মেলা উপলক্ষে বেড়াতে আসেন। বছরের অন্য সময় বেড়াতে না আসলেও এসময় তারা বড়বড় মাছ দেখতে ছুটে আসেন।

জানা যায়, প্রায় ২শ বছরের অধিক সময় পূর্ব থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পুজা উপলক্ষে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ পশ্চিমধারে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলা বসে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়। মেলা উপলক্ষে ওই এলাকার গৃহবধুরা আগে থেকেই ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করা, মুড়ি-খৈ ভাজা, নাড়কেলের নাড়ু তৈরী শুরু করে। ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।

মেলাটিকে ঘিরে জেলার গাবতলী, শাজাহানপুর, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর, ধুনট ও বগুড়া সদরে এ মেলার ব্যাপক আমেজ থাকে। মেলাকে ঘিরেই বগুড়া শহরের ফতেহ আলী ও চাষী বাজারেও বড় আকৃতির মাছ নিয়ে আসা হয়। মাছের দোকানগুলো বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে সাজানো হয়।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাবের রেজা আহমেদ বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত আছে।

মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, জাদু খেলা, মোটর সাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা রয়েছে।

বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে ঘিরে সকল প্রকার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ সদস্যরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন