ব্যাংকের মালিকানা ছাড়তে হবে উদ্যোক্তাদের

ব্যাংকিংখাতে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে দেশের বেসরকারিখাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মালিকানা পাবলিকের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দিয়েছে বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে ব্যবসার জায়গা হিসেবে না ভেবে জনগণের আমানতের সুরক্ষাও দেওয়া অতি জরুরি বলে মত দিয়েছেন তারা।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ক্রিসেল-এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাফফর আহমেদ বলেন, যারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তারা ধীরে ধীরে মালিকানা থেকে সরে যান, পাবলিক মালিক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো। তারা তো সারাজীবন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সর্বময় ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে। এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। করপোরেট গর্ভনেন্স একদম নাই। আর তা হচ্ছে না মালিকদের সদিচ্ছার অভাবে।’

তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট টাকার মধ্যে পরিচালকদের হচ্ছে মাত্র ৫ শতাংশ। আর আমানতকারীদের হচ্ছে ৯৫ শতাংশ কিন্তু সব সুবিধা নিচ্ছে ও কর্তৃত্ব করছে ওই ৫শতাংশ- মালিক পরিচালকেরা। তারা গোটা ব্যাংকের মালিক সেজে বসে আছেন। এটা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না, এটা মানা যায় না।

একই মত দেন অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী তিনবছরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর লোনেবল ফান্ড ক্রাইসিস তৈরি হবে। আমরা দেখছি প্রাইভেট সেক্টর মুনাফা করলে নিজের আর লোকসান করলে সরকারের। ফারমার্স ব্যাংক তার অন্যতম উদাহরণ। এভাবে চলতে পারে না। দেশের ৪ শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপি, ৯৬ শতাংশ অনিচ্ছাকৃত খেলাপি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ব্যাংক ব্যবসা এখন খুবই লাভজনক। তার চেয়ে বেশি লাভজনক হচ্ছে এমপিগিরি ও রাজনৈতিক ব্যবসা! বাজার অর্থনীতি রাজনীতিকে বাজারনীতিতে পরিণত করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনীতি ভালো আছে এরকম মিথ্যা তথ্য যারা প্রচার করছে, তাদের সাজা হওয়া দরকার।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকার লুটপাটকারীদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়েছে। দেশে যে উন্নয়ন হয় তার সুফল ভোগ করে ৫ শতাংশ ধনী, সাধারণ জনগণের জন্য কোনো উন্নয়ন হয় না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৯ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ধনী বাড়ার হার বাড়লে গরিব বাড়ার হারও বাড়ে। অর্থনীতি আয় বৈষম্য এত বেশি যা এশিয়ার অনেক দেশ এর ধারে কাছেও নেই।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপিঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট।

বাম জোটের সমন্বয়ক ও বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওইদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখে ঘেরাও মিছিল করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

আপনি আরও পড়তে পারেন