‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত নয়’

ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে কয়েকবার আশ্বস্ত করেছেন যে এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। আমরা তা মেনে নিয়েছি। এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণও আছে।

সোমবার (২ মার্চ) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) ও ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও বিস’র চেয়ারম্যান ফজলুল করিম।

গওহর রিজভী বলেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংখ্যালঘু নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত ও কল্যাণেই সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুরাও সমানভাবে এদেশের নাগরিক। কোনোভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে আরও শক্তিশালী হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা ভারতের সঙ্গে মিলে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় একটি ভিশন ঘোষণা করা হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দুদেশের মধ্যে ৭৫টিরও বেশি দ্বিপক্ষীয় কমিটি আছে যার মাধ্যমে দুদেশের সরকার একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ওই সময়ে কংগ্রেস সরকার ছিল এবং এখন বিজেপি সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এর কোনও প্রভাব পড়েনি।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এখন নতুন ভিশন নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে যে ভিশন ঘোষণা করা হয়েছিল এবং যে রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছিল, সেটি ভালোমতো কাজ করেছে। কিন্তু এখন আমাদের আরও কিছু করতে হবে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে গওহর জামিল বলেন, আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। কিন্তু কিছু বিষয়ের বাস্তবায়ন ধীরগতি হওয়ায় আমরা হতাশ। আমি এই বিষয়টি ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনিও এ বিষয়ে একমত।

সেমিনারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কোন প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। এছাড়া দুই দেশে নদীর পানি বন্টনের জন্য ভারত সর্বাত্মক কাজ করবে বলেও জানান তিনি। বলেন, তিস্তা সমস্যা আঞ্চলিক। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশের আগ্রহও রয়েছে। এটা নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। এ বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে সকালে দুদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সকাল পৌনে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তাকে স্বাগত জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে ভারত সরকার। তালিকায় স্থান পান ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষ, বাদ পড়েন ১৯ লাখ।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন