নারীরা যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতা কেউ কাউকে হাতে তুলে দেয় না। নিজের যোগ্যতায় অর্জন করে নিতে হয়।

তিনি বলেন, নারী যত শিক্ষিত হবে সমাজ তত এগিয়ে যাবে। আমাদের নারীরা এখন সর্বক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করছে। দেশের নারীরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।

রোববার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুনন্নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে পাঁচ মহিয়সী নারীকে জয়ীতা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা যে পারে সেটা আজ প্রমাণিত। তার সরকার নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, আমি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসি তখন হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে নারী বিচারপতি ছিলেন না। আমি এসে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করলাম সেখানে যেন নারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়। এখন সেখানে নারীরা ভালো করছেন। আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নারীরা ভালো করছেন। সেখানে তাদের ডিমান্ড অনেক বেশি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে এখন মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি এবং পরীক্ষায়ও তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ছেলেরা কেন পিছিয়ে পড়ছে সেটাও দেখতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে নারীদের সম্পৃক্ত করেছিলেন। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি দেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সব কর্মকাণ্ডে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ১১ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সহযাত্রী করা হয়েছে। নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩ সহ ডিএনএ আইন, যৌতুক নিরোধ আইন, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ ও ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা।’

এছাড়াও নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর দারিদ্র্য বিমোচন, বাল্যবিবাহ নিরোধ, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীর অংশগ্রহণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি স্ব বেতনে ছয় মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে। এছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা-তালাকপ্রাপ্ত ও নির্যাতিত নারীদের ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা চালু রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভিজিএফ, ভিজিডি ও জিআর কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমেও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল।

বিশ্বব্যাপী ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এ ব্যাপারে নারীদের যেমন সচেতনতা বাড়াতে হবে তেমনি পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ধর্ষণ পুরুষেরাই করে।

তিনি বলেন, যারা পাশবিক অত্যাচার করে তাদেরকে মানুষ বলতে ইচ্ছে করে না, তারা পশুর চেয়েও অধম।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নারী অধিকারের কথা আছে জানিয়ে দলের সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে একমাত্র সংগঠন আমাদের আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নারীদের অধিকারের কথা রয়েছে, আমাদের ঘোষণাপত্রেও সমান অধিকারের কথা বলা আছে। দেশে আর কোনো পার্টি কিন্তু এটা লিখতে পারেনি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, নারীরা যত শিক্ষিত হবে, স্বাবলম্বী হবে সমাজ তত এগিয়ে যাবে। সমাজের একটি অংশ অকেজো করে সমাজ চলতে পারে না।

নারীরা সবসময় যন্ত্রণার শিকার জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করা হয়েছে। এ সময় তিনি নারীদের কল্যাণে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। নারী দিবসে পৃথিবীর সব নারীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

আপনি আরও পড়তে পারেন