মালয়েশিয়ায় আজহারির মাহফিলে প্রবাসীদের ঢল

মালয়েশিয়ায় আজহারির তাফসীর মাহফিল প্রবাসীদের ঢল নেমেছে। সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আয়োজকরা। ভিড় সামাল দিতে পুলিশ রেলার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। হলের বাইরে হাজার হাজার প্রবাসীদের ভিড়। মালয়েশিয়ায় স্মরণকালের এই প্রথম তাফসীর মাহফিল। হলে প্রবেশ করতে না পেরে চলে গেছেন বেশিরভাগ মানুষ।

রাজধানী কুয়ালালামপুর আমপাং পার্কের উইসমা এম.সি.এ কনভেনশন সেন্টারে মালয়েশিয়া প্রবাসী কমিউনিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত তাফসীর মাহফিলে রোবববার (৮ মার্চ) সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রবাসীরা আসতে থাকেন মাহফিল স্থলে। মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বেলা ৩টার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য।

স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মাগরিবের নামাজ শেষে তাফসীর পেশ করবেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আসার পরে কয়েকটি মাহফিল করলেও মালয়েশিয়ায় এই প্রথম স্মরণকালের তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত ২৯ জানুয়ারি মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে এখানেই এ বছরের তাফসির প্রোগামের ইতি টানতে হচ্ছে। তাই, মার্চ পর্যন্ত আমার বাকী প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হল। রিসার্চের কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে এসেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে আবারও দেখা হবে ও কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’

সে দিনের পর থেকে তিনি আর কোন ওয়াজ মাহফিলে যাননি। বলা হয়, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় বক্তা হিসেবে মাওলানা আজহারীর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে।

বছরের শুরুতে আজহারীকে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছিল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জয়পুরহাটে তার এক মাহফিলে ধর্মান্তরের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ বছর জানুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুরে তারই এক মাহফিলে ১২ জন ভারতীয় নাগরিককে ধর্মান্তরের এক ঘটনাও ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।

গত ২৪ জানুয়ারী লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামে আজহারীর মাহফিলে একই পরিবারের মোট ১২ জন সদস্য এক সঙ্গে ইসলামে দীক্ষা নেয়। আলোচিত এই হিন্দু পরিবারটি এসেছিল ভারত থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ ১২ জনকেই আটক করে এবং তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।

সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি আজহারীকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ তোলার পর তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।

এ আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ৩১ জানুয়ারি আজহারী তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমি কোন দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নই। আর কোন রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আমার শিক্ষা জীবনও কাটেনি। মিথ্যাচার যেন এদেশে মহামারিতে রুপ নিয়েছে। আর সেটা যখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমে, দেশের কোন উচ্চ পদস্থ দায়িত্বশীলের মুখ থেকে প্রকাশ পায়, তখন আফসোস আর হেদায়েতের দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এদেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর সেটা হল ‘জামাত শিবির’। এবার আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোন অথবা মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হোন। দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ভিন্নমতকে দমনের এই অপকৌশল পুরো জাতির ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

একজন দা’ঈ ইল্লাল্লাহর কোন দল নাই। তিনি সকল দলের, সকল মানুষের। তাদেরকে দলীয়করণ না করে ব্যাপক ভাবে দ্বীনের খেদমতের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। দেশের সব দলের মানুষ যেন তাদের দ্বারা আলোকিত হতে পারে সেটার পরিবেশ থাকা উচিত।

আমি সরকার বিরোধী নই। আমি অন্যায় বিরোধী। তাই, কোন অন্যায় দেখলে সে ব্যাপারে কথা বলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এবার সে অন্যায় যেই করুক না কেন, যে দলই হোক না কেন।

ব্যক্তিগতভাবে, এ দেশের রাজনীতিতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। স্যোশাল এক্টিভিটি ও দা’ওয়াহ এক্টিভিটি এদুটি কাজই হল আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

আমার মিশন হল এ দেশে ইসলামের মধ্যমপন্থার সৌন্দর্য্যকে প্রমোট করা। যেটাকে আরবীতে বলে আল-ওয়াসাতিয়্যাহ। জীবন যাপনে ভারসাম্য, চিন্তায় ভারসাম্য, কাজে ভারসাম্য, এবং আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ মুসলিম তৈরি করা।

ভিন্ন মতের ব্যাপারে আমি বরাবরের মতই শ্রদ্ধাশীল। সকল মুসলমানকে আপন ভাইয়ের মত শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাদের নাজাতের জন্যে মন ভরে দোয়া করি। কারো পিছু লেগে থাকা, কাদাছোড়াছোড়ি করা এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে অন্তরে হিংসা পুষে রাখা পছন্দ করিনা। কারণ ইসলাম আমাকে এটা শিখায়নি। আর প্রিয় নবীর আদর্শও এমনটি নয়।

আমি চাই বিভিন্ন ঘরনার আলেমরা সহনশীলতার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা করুক। তাদের উদারতার প্রভাব পড়ুক দেশের সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে। সংকীর্নতা আর হীনমন্যতা পরিহার করে, দ্বীনের সকল দ্বায়ীরা কুরআন সুন্নাহর সুধা বিলাতে থাকুক পুরো দেশ জুড়ে, পুরো পৃথিবী জুড়ে।

আপনি আরও পড়তে পারেন