অপহরণের ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি ব্যবসায়ী বাছেদের

অপহরণের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী বাছেদ আলমের। অপহরণের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মামলা হলে পুলিশ অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতারও করে। পরে আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে থাকলেও পুলিশ বাছেদের কোন সন্ধান দিতে পারেনি। বাছেদ জীবিত আছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না র‌্যাব।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকার বাসিন্দা বাছেদ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে কেমিকেলের ব্যবসা করতেন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি নিজ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরে তার মুক্তিপণ বাবদ পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবিও করা হয়। তবে মুক্তিপণের টাকা দেয়া না হলেও বাছেদ আলম এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করছেন তার স্ত্রী পুতুল চৌধুরী। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই স্বজনরা বাছেদকে জীবিত উদ্ধারের দাবি করছেন প্রশাসনের কাছে।

অপহৃত ব্যবসায়ী বাছেদের স্ত্রী পুতুল জানান, নিখোঁজ হওয়ার সময় বাছেদের ৩টি মোবাইল ফোন নম্বরের মধ্যে বাংলালিংক ও এয়ারটেল নম্বর দুটি বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বাছেদের ব্যবহৃত ফোনের রবি নম্বরটি। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখন নম্বরটি ব্যবহার করছিল এক নারী। তার অবস্থান ছিল চট্টগ্রামে। বিষয়টি তখন র‌্যাব-১১ এর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট বাছেদের ব্যবহৃত ফেসবুক একাউন্টও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।

তিনি আরও জানান, মামলার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ দুইটি মোবাইল নম্বর থেকে বাছেদের মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বাছেদ তার বাড়ির নিকটবর্তী সাদ্দাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা নজরুল নামে একজনের জিম্মায় আছে বলে পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়। একটি মোটরসাইকেল বিক্রি নিয়ে নজরুল ও বাছেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বাছেদের সঙ্গে টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল তার মামাতো ভাই খোকনের সাথেও। তাই বাছেদের পরিবারের ধারণা, প্রতিবেশি নজরুল ও মামাতো ভাই খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাছেদ অপহরণের বিষয়সহ তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য বেরিয়ে আসবে।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাছেদ তার মামাতো ভাই খোকনকে ধার দেয়া বাবদ পাওনা ১৫ লাখ টাকা ফেরত চাইলে খোকনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে খোকন বাছেদকে দুনিয়ায় থাকতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। টাকা পাওনা ও হুমকির বিষয়টি তখন বাছেদ তার স্ত্রীকেও জানায়। তবে হুমকির ৭ দিনের মাথায় বাছেদ অপহৃত হন। বাছেদ অপহরণের পর নজরুল, তার স্ত্রী আয়েশা ও শ্যালিকা লাকীকে পুলিশ গ্রেফতার করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। লাকীই তার স্বামী নজরুলের কথায় বাছেদের পরিবারকে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তখন স্বীকার করে। পরে এ তিনজন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকা থেকে সড়ে গিয়ে আত্মগোপন করে।

মামলার বাদি নিখোঁজ বাছেদের বাবা অহিদুল আলম ২০১৪ সালের ৯ জুলাই মারা যান। এরপর থেকে মামলার কার্যক্রম থমকে যায়। স্বামী বাছেদ আলম বেঁচে আছেন এবং তিনি ফিরে আসবেন- এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন দুই সন্তানের জননী অপহৃত বাছেদের স্ত্রী পুতুল চৌধুরী।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে নজরুলের একটি ফেসবুকে বাছেদ আলম ও আসামি নজরুলের ছবি দেখতে পাই। পরবর্তীতে ওই ফেসবুক থেকে বাছেদ এবং নজরুলের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু সাত বছরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বামী বাছেদের সন্ধান দিতে না পারায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

বর্তমানে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা র‌্যাব-১১ এর উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, বাছেদ আলম অপহরণ মামলাটির তদন্ত কাজ চলছে। বাছেদের মোবাইল নম্বর এবং ফেসবুক আইডি সক্রিয় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী পুতুল চৌধুরী।

বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাবের এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাছেদ এখনো জীবিত আছেন কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন