চাঁদপুরে বেশ কয়েক মেট্রিন টন ত্রাণের চাল বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও অসহায়দের মাঝে কিছু পরিমাণ বিতরণ করার পর ৩৫ বস্তা চাল নিজ বাড়িতে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ খবর ছড়িয়ে পাড়ার সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। এ ঘটনায় ব্যাপক ভাঙচুরসহ প্রতিপক্ষের হামলায় চেয়ারম্যান ও তার এক সহযোগী আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনির বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ৩৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে।
ত্রাণের চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে এলাকার একটি পক্ষ চেয়ারম্যান রনির ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে চাল রয়েছে-এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে লোকজন সেখানে হামলা করে। এসময় চেয়ারম্যান রনি ও তার সহযোগী সফিকুল ইসলাম হামলায় আহত হন। হামলাকারীরা চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুর করে।
পরে সদর মডেল থানার ওসি মো. নাসিমউদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এসময় ৩৫ বস্তা ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কল্যাণপুর ইউনিয়নের অসহায় ও দুঃস্থদের নামে বিতরণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে দফায় দফায় বেশ কয়েক মেট্রিন টন ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটোয়ারী অসহায়দের মাঝে কিছু বিলি করার পর তার বাড়িতে গোপনে ৩৫ বস্তা চাল লুকিয়ে রাখেন। এরপর চেয়ারম্যান রনি তার বাড়িতে মজুদ করা চাল রাতের আঁধারে একটি মিনি ট্রাকযোগে পাচার করার চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে দক্ষিণ দাসাদী গ্রামের গাজীর হাট বাজারে ট্রাকভর্তি ত্রাণের চাল দেখে লোকজন তা আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়।
মুহূর্তের মধ্যে চেয়ারম্যান রনি পাটোয়ারী কর্তৃক হয়রানির শিকার কয়েকশ’ জনতা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারীর বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রনি পাটওয়ারীর সহযোগী সফিকুল ইসলাম সফুকে বিক্ষুব্ধ জনতা বেধড়ক মারধর করে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে।
কল্যাণপুর ইউনিয়নের দাসাদী গ্রামের বাসিন্দা সুমন হাওলাদার, জাকির, শাখাওয়াত, রাজন, সুমন পাটওয়ারী, জসিম খান জানান, আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমাদের কোন সহায়তা না দিয়ে চেয়ারম্যান রনি সরকারি চাল পাচার করছে। জেলে কার্ডের ৪০ কেজি চালের বিপরীতে দিয়েছে ২০ কেজি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের মারধর করে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
তাদের একজন বলেন, ‘জনগণের হক মেরে রনি পাটওয়ারী ইউনিয়নে ৩টি আলিশান বাড়ি করেছেন। সরকার কর্তৃক তৈরি করে দেওয়া ইউনিয়ন পরিষদে অফিস না করে তার বাড়িতে অস্থায়ী অফিস তৈরি করে কার্যক্রম চালান। তাই এসব ঘটনায় তাদের মতো ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই হামলায় অংশ নেন।’
এদিকে, রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত হয়।