ঈদের নামাজ কি ঘরে আদায় করা যাবে?

ঈদ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদযাপনের উপলক্ষ। এটি এমন এক সময় আসল যখন করোনাভাইরাসের মহামারির সঙ্গে লড়াই করছে গোটা দুনিয়া। আর তাই আনন্দের এ সময়েও দিনটাতেও বিষাদ পিছু ছাড়ছে না।

ঈদের নামাজ দিয়েই শুরু হয় ঈদের উদযাপন। গত দেড় হাজার বছরের ঈদের নামাজ পরিত্যক্ত হওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায় না। ঈদের নামাজ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গগুলোর একটি।

দুর্যোগ, বিপর্যয় যতই আসুক না কেনো এবাদত বন্দেগী থেমে থাকবে না। আর এই কঠিন সময়ে শরিয়ত স্বীকৃত পদ্ধতিতে ইসলামের হুকুম পালনের কথা বলছেন আলেম ওলামারা।

যারা কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে আছেন এবং যারা করোনার ভয়ে ভিড় থেকে দূরে থাকতে চান তারা কীভাবে ঈদের নামাজ আদায় করবেন?

মূলত ঈদের নামাজ জুমার নামাজের মতই। জুমার জন্য যেসব শর্ত ঈদের জন্যও সেই একই শর্ত। জুমা হল সাপ্তাহিক ঈদ। আর ঈদ আসে বছরে দুবার।

তবে জুমা এবং ঈদের নামাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। জুমার নামাজ ফরজ হলেও ঈদের নামাজ ওয়াজিব। কোনো কোনো মাজহাবের মতে, ঈদের নামাজ সুন্নত।

জুমার নামাজে খুতবা ওয়াজিব আর ঈদের নামাজে খুতবা সুন্নত। জুমার নামাজের পূর্বে দুটি খুতবা দিতে হয়। আর ঈদের নামাজের খুতবা দতে হয় নামাজের পরে। এছাড়া ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির দিতে হয়। প্রথম রাকাতের শুরুতে আর পরের রাকাতে রুকুর আগে তিন তিনটি তাকবির দেয়ার নিয়ম।
যারা মসজিদে যেতে পারছেন না বা সতর্কতামূলক যেতে চান না তাদেরও ঈদের নামাজ জামাতেই পড়তে হবে। জামাত ছাড়া একাকী পড়ার বিধান শাফেয়ী মাজহাবে থাকলেও হানাফি মাজহাবে নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। জামাত ছাড়া একাকী ঈদের সালাত আদায় করা যায় না বলে স্পষ্টভাবে বলেছে হানাফি মাজহাব। রাসুল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরাম কখনও একাকী ঈদের নামাজ আদায় করেননি বলে দাবি তাদের।

এখন প্রশ্ন হলো- মসজিদ ছাড়া ঘরে ঈদের জামাত করা যাবে কিনা।

শর্ত সাপেক্ষে করা যাবে। শর্ত হচ্ছে ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিন জন বয়স্ক পুরুষ থাকতে হবে। বড় ঘরের বৈঠক খানায় অথবা বাড়ির ছাদে বা উঠানে অথবা যে কোনো খোলা জায়গায় ইদের নামাজ আদায় করা যাবে।

হযরত আনাস (রা.) একবার ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি, পরে তিনি বাড়ির সবাইকে একত্র করে তার গোলামকে ঈদের নামাজের ইমামতি করতে বললেন। (বুখারী শরীফ ১/১৩৪)

এসব শর্ত সবার জন্য পালন করা সহজ হবে না। অনেকেরই বড় বাড়ি নেই। আবার বাড়ির সামনে খোলায় জায়াগাও নেই অনেকের। সে ক্ষেত্রে ঈদের নামাজ নয়, বরং চার রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন হযরত ইবনে মাসউদ (রা.)। [ইবনে আবি শাইবা ৪/২৩৫]

আতা ইবনে রাবাহ (রা.) বলেছেন, কোনো কারণে ঈদের নামাজ পড়তে না পারলে দু’রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করবে। [বুখারী ১/ ১৩৪]

হানাফি মাজহাবে এ জন্য দু রাকাত ও চার রাকাত উভয়টির অনুমোদন রয়েছে। তবে চার রাকাত পড়া উত্তম।

চাশতের নামাজ পড়ার সময়:

সূর্য একটি বল্লমের সমান তথা ১ মিটার পরিমাণ ওপরে উঠার পর এ নামাজ পড়তে হয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর ইশরাক নামাজ আদায়ের সময় থেকে শুরু করে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত এ নামাজ পড়া যায়।

আরবরা বলত, চাশতের নামাজের সর্বোত্তম সময় হলো- সূর্যোদয়ের পর উটের বাচ্চা যখন গরম অনুভব করে; সে সময়টি হলো চাশতের নামাজের সময়।

আলেমদের মতে, ঈদের নামাজের বদলে চাশতের নামাজ পড়লেও পরম করুণাময় আল্লাহ চাইলে ঈদের সওয়াব দিয়ে দিবেন। যাদের ঈদের জামাতে শরীক হওয়া সম্ভব তারা অবশ্যই তাতে শরীক হবেন।

যাদের মসজিদে বা ঘরে জামাত করতে সমস্যা হয় তারা মহল্লার মসজিদে ঈদের জামাত শেষ হবার পর ঘরে দুই রাকাত বা চার রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করে নিবেন। এতে অতিরিক্ত ছয় তাকবির দেয়া লাগে না। নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে এবং সাধারণ নফল নামাজের মতোই আদায় করতে হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন