ঢাকার খাল রক্ষা: টাকা ফুরায়, ফুরায় না নগরবাসীর দুর্ভোগ

বর্ষা এলে যখন জলাবদ্ধতায় আটকা পড়ে নগরবাসী। ঠিক তখনই শুরু হয় রাজধানীর খাল পুনরুদ্ধার আর রক্ষার আলোচনা। আলোচনার টেবিলে পাশও হয় খাল রক্ষার নামে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। এরপর টাকা ফুরায়, সময় যায়; যায় না শুধু খাল দিয়ে পানি, ফুরায় না শুধু নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ। উল্টো ছোঁয়াচে রোগের মতো বহমান কোন খালে প্রভাব বিস্তার করে দখলকারীদের ক্ষমতা। এই খাল দখলদার দলে শুধু ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই নাই আছে স্বয়ং সিটি করপোরেশনের মতো সরকারি সেবা সংস্থাও। 

এই যেমন রাজধানীর নন্দীপাড়া খাল। কয়েক দশক আগেও এই খালের স্বচ্ছ জলে ডুব-সাঁতারে শক্তপোক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরদের দূরন্তপনার শৈশব। বছরের পর বছর ধরে সেই প্রাণ ভরপুর জলের আধারটিই আজ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ঢাকার এই খালের জলের শৈশব স্মৃতি আজ ঢাকা পড়েছে আবর্জনার তলে। এমন অভিজ্ঞতা খালপাড়ের বাসিন্দাদের।

এই খালপাড়ে দাঁড়ালে দৃষ্টিসীমায় দেখা মিলবে খালের জলকে জিম্মি করা স্তুপের মতো জমাট আবর্জনা। খালটি যেমন এর আশপাশের বাসিন্দা ও পাড় ঘেঁষে চলাচলকারীদের বিলায় দুর্গন্ধ তেমনি ময়লার ভারে ব্যাহত হয় এর পানির প্রবাহ।

খালটির এমন বেহাল দশার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা সামনে আনছেন সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ফেলাকে। প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের ভ্যান এসে এখানে নির্দ্বিধায় ময়লা ফেলে চলে যায় বলে জানান তারা।

ময়লা-আবর্জনা ফেলেই প্রবাহমান বেগুনবাড়ী খালের প্রায় অর্ধেক দখল করে নিয়েছে খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর আগে মেরাদিয়াতেও একই কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। খালের ওপর কর্তৃপক্ষ গড়ে তুলেছে পাকা ঘর। তাদের দেখে আশপাশ দখল শুরু করেছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে সিটি করপোরেশন নগরের ময়লা এনে খালে ফেলে বলেই নগরবাসীকে আটকা পড়তে হয় জলাবদ্ধতায়।

খাল দখল করে সিটি করপোরেশনের ময়লা সংগ্রহের ঘর নির্মাণ করাকে সরকারি উদ্যোগে খাল দখল হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। এমনকি সরকারের এক সংস্থা খাল ভরাট-দখল করবে আর আরেক সংস্থা এসে উদ্ধার চালাবে; এমন কাজকে দুরভিসন্ধিমূলক বলছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

এসব খালের পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে সিটি করপোরেশনকে বারবার চিঠি দিয়েও কোন সাড়া মেলেনি বলে জানান ঢাকা ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তবে তার আশা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত অচিরেই তারা এটা নজরে আনবেন এবং খাল দখল থেকে বিরত হবেন।

খাল দখলের দায় স্বীকার করছে সিটি করপোরেশনও। তবে, জমি সংকটেই তাদের খালে যেতে হয়েছে বলেন জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, বর্তমানে একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) বর্জ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। শিগগিরই আরেকটি একটা অস্থায়ী এসটিএস নির্মাণ করে খাল দখল করে গড়ে তোলা ময়লা সংরক্ষণের ঘরটি সরিয়ে ফেলা হবে।

তথ্য বলছে, গেল দশ বছরে খাল রক্ষায় শুধু ঢাকা ওয়াসাই ব্যয় করেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রক্ষা পায়নি একটি খালও।

আপনি আরও পড়তে পারেন