উপবৃত্তি বিতরণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি, তদন্তে নেমেছে দুদক

দেশে উপবৃত্তি প্রদানে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে সরকার। তাই সারা দেশে প্রাথমিক থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে এই উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে এসব উপবৃত্তি বিতরণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য এর চরম ভুগান্তিতে পড়তে দেখা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এই দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির মধ্যে বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা ও এমনকি শিক্ষকরাও জড়িত থাকতে দেখা যায়। যে কারণে সরকারের এই উদ্যোগ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এদিকে উপবৃত্তির টাকা নিয়ে এই দুর্নীতিতে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন আর ভুক্তভোগীদের করা শত শত অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার টনক নেড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিছু অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এবং বাকিগুলো নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করবে সংস্থাটি।

জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর দুদকের নির্দেশনায় তিন সদস্যের কমিটি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি)। এতে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক (একিউএইউ শাখার উপপরিচালক) নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবেন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদকের কাছে আসা অভিযোগের মধ্যে উপবৃত্তির তালিকায় দরিদ্র শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, উপজেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ ও অসাধুতা আর অসততার আশ্রয় নেওয়া। এক্ষেত্রে প্রকৃত দরিদ্র ও মেধাবীরা বাদ পড়ছে। টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছে বা ভুয়া শিক্ষার্থী সাজিয়ে তাদের টাকা তুলছেন প্রধান শিক্ষকরা।

জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির উপবৃত্তি বিতরণের সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন হওয়ায় অন্তত ২০ লাখ শিক্ষার্থী চলতি শিক্ষাবর্ষের উপবৃত্তির টাকা পায়নি। এতে করে চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থাকার পরও নতুন করে বিকাশ হিসাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকাশের সার্ভারে তথ্য আপলোড না হওয়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উপবৃত্তির সুবিধাভোগীদের রকেট হিসাব থাকার পরেও স্কিমের কর্মকর্তারা গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে বিকাশ হিসাব খোলার নির্দেশনা দেয়। এতে করে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দুর্ভোগে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিকাশ হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করা হয়। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে বিকাশের হিসাব খুলতে পারেনি। এদিকে সার্ভারের মাধ্যমে বর্তমানে ষষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তথ্য ৭ নভেম্বরের মধ্যে দিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সফটওয়্যারের লিংক ও পাস ওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।

স্কিম সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মাধ্যমিক স্তরের (স্কুল-মাদ্রাসা) ৩৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্তত ৩০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮ হাজার (কলেজ-মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠানের ৪ থেকে ৫ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য আপলোড করতে হবে। সার্ভারটির সেই সক্ষমতা নেই। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয়েছে। স্কিম অফিসে প্রতিদিন সারা দেশের হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আপলোড সমস্যার অভিযোগ আসছে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নাসরিন আফরোজ সার্বিক বিষয় নিয়ে বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সার্ভিস প্রোভাইডারকে অ্যাকাউন্ট করতে হবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য তাদের পছন্দ অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারবে। শুধু বিকাশে হিসাব খোলার নির্দেশনা দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বকেয়া উপবৃত্তির টাকা পরিশোধ করতে প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী হিসাব খুলতে পারবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন