বাড়ির মেইন গেটে ইটের প্রাচীর অবরুদ্ধ একটি পরিবার

বাড়ির মেইন গেটে ইটের প্রাচীর অবরুদ্ধ একটি পরিবার

মোঃ নুরুজ্জামান হোসেন হিলি স্থলবন্দর প্রতিনিধি:গত দুইমাস ধরে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে অসহায় এক বৃদ্ধার পরিবার। বাড়ির মেইন গেটের সামনে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন অবরুদ্ধ পরিবারটি।অর্থবিত্ত,ক্ষমতার দাপট আর পেশি শক্তির কাছে অসহায় মনবতা।এমনি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে।

উপজেলা ইউএনও,  চেয়াম্যানের কাছে ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ অসহায় পরিবারটির। ফলে তাদের এখন অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিবেশীর এই অমানবিক আচরণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা।এঘটনাকে চরম অনামবিক বলেন মনে করেন তারা। মানুষের চলাচলের রাস্তা কখনোই বন্ধ করা ঠিক নয় বলেও দাবি স্থানীদের।

এবিষয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়াম্যান খায়রুল আলম রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বৃদ্ধার বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি অমানবিক। তিনি জানান,প্রাচীর নির্মাণ কারী শাহানাজ পারভিন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। এ কারণে সমাধান হতে বিলম্ব হচ্ছে, তবে উভয়ের সাথে আলোচনা চলছে বিষয়টি মিমাংসা করে বৃদ্ধার চলাচলের রাস্তা বের করে দেয়া হবে।

এবিষয়ে বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসাহক আলী মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে না তা হতে পারে না। আইন সবার জন্য সমান।বৃদ্ধার পরিবারের সাথে যে অচরণ করা হচ্ছে তা অন্যায় ও অমানবিক। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হয়ে শাহানাজ পারভিন যে কাজটি করছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি অচিরেই বৃদ্ধার পরিবারের চলাচলের জন্য রাস্তা বের করে দেওয়ার সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

 সরেজমিনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৬০ উর্ধ জবেদা বিবি’র বাড়ির প্রধান গেটের সামনে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কাটলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। অন্য দিকে চলাচলের রাস্তা কিছুটা থাকলেও প্রতিবেশী শাহানাজ বেগম ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন পুরোপুররি অবরুদ্ধ বৃদ্ধা জবেদা বিবি’র পরিবার। নির্মানাধীন ভূমি অফিসের ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টোপকে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয় ৬০ উর্ধ জবেদা বিবি ও তার পরিবারের সদস্যদের। জীবণের শেষ প্রান্তে এসে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে কখনো ভাবেনি এই বৃদ্ধা ও তার পরিবার।

বৃদ্ধা জবেদা বিবি জানান,এতোদিন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করলেও বাড়ির প্রধান দরজার সামনে স্থানীয় ভূমি অফিস এবং প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন ইটের প্রাচীর তৈরী করায় তাকে এখন ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টপকে তাকে বাড়িতে যাতযয়াত করতে হয়। এভাবে চলাচল করতে গিয়ে তাকে কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয়েছে।

বৃদ্ধার ছেলে মোঃ নাসির উদ্দিন এর অভিযোগ, নির্মানাধীণ ভূমি অফিসের পিছনের দিকে সরকারী ভাবে চলাচলের রাস্তা দেয়া হলেও প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন তার লোকবল নিয়ে রাতারাতি বাড়ির সামনে ইটের প্রাচীর তুলে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অথচ ওই জায়গাটি শাহানাজ পারভিনের বাবা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ষ্ট্যাম্পের উপর লেখা-পড়া করে কেনা হয়েছে। সেখানে শাহানাজ পারভিনের স্বাক্ষরও আছে।

তিনি জানান,বিষয়টি নিয়ে উপজেলার ইউএনও এবং চেয়াম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন বিচার পাচ্ছিনা। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে তারা নতুন-নতুন তারিখ দিয়ে বিচারের নামে কাল ক্ষেপন করছে অথচ তারা কোন বিচার করছেন না। তিনি আরো  অভিযোগ করেন, আমরা অসহায় হওয়ায় আমাদের বিচারের আশায় সবার দ্বারে-দ্বারে ঘুরেও কোন বিচার পাচ্ছি না।

স্থানীয় বকুল হোসেন,মোখলেছার রহমান,মমিনুল ইসলাম জানায়, ভূমি অফিস নির্মানের সময় সাধারণের চলাচলের জন্য অফিসের পিছন দিকের সরকারী ভাবে রাস্তা ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্ত শাহানাজ পারভিন রাতারাতি ওই বৃদ্ধার বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এখন পরিবারটি বাড়ি থেকে বের হতেও পারছেনা আবার বাড়িতে ঢুকতেও পাড়ছেনা। ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা বৃদ্ধা ও তার পরিবারের চলাচলের রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি শাহানাজ পারভিনের লোকজন নির্মানাধীন ভূমি অফিনের পিছনে সরকারী রাস্তা দখল করে আরো একটি ইটের ওয়াল নির্মানের সময় বিরামপুর থানা পুলিশ এসে বাধা দেয়। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ওয়াল নির্মান করলে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতে মুসলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে নিয়ে আসে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন প্রাচীর নির্মানের বিষয়টি অমানবিক হয়েছে শিকার করে বলেন, সেখানে প্রাচির নির্মাণ করে তার বৃহৃত স্কুটি (মটরসাইকেল) রাখার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন আমার জায়গায় আমি কাউকে ব্যবহার করতে দিবো না। তবে তিনি শিকার করেন তার বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমান প্রতিবেশী নাসির উদ্দিনের কাছে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জায়গাটির পজিশন বিক্রি করেছেন। যা রেজিষ্ট্রি করা হয়নি।

আপনি আরও পড়তে পারেন