অযত্ন আর অবেহলায় পড়ে আছে আতাইকুলা বধ্যভূমি ॥ পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

অযত্ন আর অবেহলায় পড়ে আছে আতাইকুলা বধ্যভূমি ॥ পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ স্বাধীনতার ৪৮বছর পার হলেও আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী একমাত্র ঐতিহাসিক ৫২জন শহীদের বধ্যভূমিতে। ৫বছর পার হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা। 


বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। কিন্তু এটি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে ৫২জন শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার দ্রুত বাস্তবায়ন চান শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।


নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রোজ রবিবার সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী।

মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে  প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ী থেকে নগদ টাকা স্বর্নালংকাসহ বাড়ীর নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ীর উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে।

একের পর এক নারীদের উপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের উপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়ীতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোন রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।

প্রদ্যুত পাল জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সাথে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক।  হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়ীতে যায়।

 
সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক গত ১৯৯৬সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোন রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর এখানে আর কোন কাজ হয়নি। তাই বধ্যভূমিটি পরে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। 


শহীদ গোবিন্দ চরন পালের ছেলে গৌতম পাল বলেন, অনেক চেষ্টার পর ২০১৫সালে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫২জন শহীদের আত্মদান স্মরনে বধ্যভূমি সংরক্ষন, শহীদদের নাম সরকারি গেজেট অন্তভর্’ক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের অসহায় পরিবারকে মূল্যায়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

কিন্তু জমি অধিগ্রহনের সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত বধ্যভ’মি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমরা ইতিমধ্যেই ৮শতাংশ জমি বধ্যভ’মিতে দান করেছি। আশা রাখি দ্রুতই বধ্যভ’মি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আর আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরন করা হবে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। গনপূর্ত বিভাগকে জমি অধিগ্রহনের জন্য নির্র্র্র্র্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বধ্যভূমি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন