হ‌ুমায়ূন-শাওনের বিয়ের ১৬ বছর

হ‌ুমায়ূন-শাওনের বিয়ের ১৬ বছর

হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হয়েছেন ৮ বছর আগে। তার স্মৃতি প্রতি মুহূর্তে বহন করে চলেছেন মেহের আফরোজ শাওন। শনিবার তাদের বিয়ের ষোলো বছর পূর্ণ হলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ও হ‌ুমায়ূনের দুটি ছবি শেয়ার করে সেই কথা জানালেন বরাবরের মতো। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন হ‌ুমায়ূন ও শাওন। তাদের রয়েছে দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত।

দিনটি নিয়ে বছর কয়েক আগে শাওন লেখেন, “খুব সাদামাটা ভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমার বিয়েটা… ভেবেছিলাম কোনরকম একটা শাড়ি পড়ে তিন বার কবুল বলা আর একটা নীল রঙের কাগজে কয়েকটা সাইন…

হ‌ুমায়ূনের বন্ধুরা আছেন তার পাশে.., আর আছেন তার মা… প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের মা (আমার শাশুড়ি মা’র প্রিয় বান্ধবী) যখন তার কাছে বিয়ের খবর জানিয়ে আমাদের জন্য দোয়া চাইতে গেলেন তখন তিনি স্পষ্টভাবে বললেন তার বড় পুত্রের বুদ্ধি এবং দূরদর্শিতার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা আছে… বড় পুত্র যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই নিজের ভালো বুঝেশুনেই নিয়েছে… নিজে উপস্থিত না হলেও প্রিয় পুত্রের সিদ্ধান্তের প্রতি তার শুভকামনা সব সময়ই থাকবে…

আমার পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে নেই.., এমনকি নেই কোনো বন্ধুও… সবাই ত্যাগ করেছে আমাকে…

ডিসেম্বরের ১১ তারিখ হ‌ুমায়ূন আমাকে জোর করে পাঠালেন নিউমার্কেটে… উদ্দেশ্য একখানা হলুদ শাড়ি কিনে আনা, যেন সন্ধ্যায় আমি হলুদ শাড়ি পড়ে নিজের গায়ে একটু হলুদ মাখি… বললেন- ‘তোমার নিশ্চয়ই বিয়ে নিয়ে, গায়েহলুদ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল… আমাকে বিয়ে করার কারণে কোনোটাই পূরণ হচ্ছে না… আমি খুবই লজ্জিত… তারপরও আমি চাই আজ সন্ধ্যায় তুমি হলুদ শাড়ি পড়ে ফুল দিয়ে সাজবে… নিজের জন্য.., তোমার ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য… আমার জন্য… আমরা দু’জনে মিলে আজ গায়েহলুদ করবো…’

আমি একা একা শাড়ি কিনলাম… গাঁদা ফুলের মালা কিনলাম… কী মনে করে একটা লাল পাঞ্জাবিও কিনে ফেললাম…

সন্ধ্যায় নিজে নিজে সাজলাম… বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে আমার চোখ ফেটে পানি চলে আসলো… চোখ মুছে খোঁপায় কানে গাঁদাফুলের মালা গুঁজলাম… হঠাৎ শুনি বাথরুমের দরজায় ধুমধাম শব্দ… দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি ডালা কুলো হাতে মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবি, পাশে ৩ বছরের ছোট্ট অমিয়… একটু দূরে লাল পাঞ্জাবি পরা হ‌ুমায়ূন ঠোঁট টিপে হাসছেন… হই হই করে ঘরে ঢুকল হ‌ুমায়ূনের আরও বন্ধু আর তাদের স্ত্রীরা… তারা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পাশের রুমে…

চার-পাঁচটা প্রদীপ দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি পাশ… সেখানে হলুদের কী স্নিগ্ধ ছিমছাম আয়োজন..! লেখক মইনুল আহসান সাবের ভাইয়ের স্ত্রী কেয়া ভাবি আর মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবি আমার আর হ‌ুমায়ূনের হাতে ‘রাখি’ও পড়িয়ে দিল… সেকি খুনসুটি..! সেকি আল্লাদ..! সে এক অন্যরকম গায়েহলুদ… আরেক ভাবি নামিরা স-ব মেয়েদের হাতে মেহেদি দিয়ে দিল… আমার আর হ‌ুমায়ূনের দুই গাল কাঁচা হলুদে রাঙা…।”

আপনি আরও পড়তে পারেন