তিনি শুধু মাত্র একজন দক্ষ শিক্ষক,শিক্ষক প্রশিক্ষক,সাংবাদিক ও উদ্দ্যোগক্তা নয় তিনি একজন সফল লেখক ও বটে। তিনি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশের সর্বভৌমত্বকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন।
আজকে প্রকাশীত কবিতায় তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস তথা ১৭৫৭ ইং থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে কবিতার চয়নের মাধ্যমে নিবন্ধিত করেছেন। আমি মনে করি অদ্য প্রকাশিত কবিতাটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য সহযোগী হবে।
মোঃশেফায়ত আলী ( প্রতিনিধি- ক্সবাজার সদর উপজেলা)
আমি লাল-সবুজে স্বাধীন বাংলা
(১)
আমি সবুজ শাড়ীতে ঘোমটা পরা স্বর্গীয় অপরূপ কামিনী,
নিদারুন আম্র সৌরভে সজিব প্রেমময়ী প্রিয়-দেশ মাতা।
আমি প্রাণবন্ত,
আমি জীবন্ত-
মায়াবী এক বিয়োগান্ত ইতিহাস।
আমি- আমার বিদ্রোহী ধ্বনি- প্রতিধ্বনি;
নজরুলের সাহিত্যের প্রতিভায়।
সৃজনশীল সৃষ্টি ;
জসিম উদ্দীনের নকশি কাঁথায়।
জীবন-যৌবন রূপ-অপরূপ ;
জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলায়।
ধর্ম- কর্ম ;
চর্যাপদ থেকে আধুনীক সাহিত্য – বাংলায়।
(২)
১৭৫৭ এ আমি ; নবাব সিরাজউদৌলার রাজমাতা,
পলাশীর আম্র কাননে আমার সবুজ শাড়ী;
মহা বীর সিরাজদের রক্তে হলো রঞ্জিত !
সবুজের মাঝে লালচে লালচে রঙ্গের আভা-অংকিত।
মীরন, মীরজাফর, জগৎ সেট, রাজবল্লভ,
আর ঘষটিদের হাতে লাঞ্ছিত-লুন্ঠিত;
আমার স্বাধীনতা।
অতপর দু’শ বছর দাসী হয়ে অশ্রূমাখা নয়নে জম্ম দিয়েছি-
তিতুমীর, দুদু মিয়া, সুর্যসেন, প্রীতিলতা, শরীয়তউল্লাহ,ইলতুতমিশ,
চট্রলার বীর রজব আলী;
অলিখিত অস্র সূর্য সন্তান ।
আমায় দাসীর অপবাদ থেকে মুক্তির প্রয়াসে-সংলাপ;
নবাব আব্দুল লতফি -মতি লাল নহেরেু,
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- ভাসানী’র প্রয়াসে,
জাতীয় কংগ্রেস, বঙ্গবঙ্গ, মুসলিমলীগ,হিন্দু মহাসভা,
এবং ছিল ধর্মীয় মতানৈক্য ওহাবী ,ফরায়েজী – দ্বিজাতি তত্ত্ব।
সমতট – পুন্ড্র নগরে;
চন্দ্রদ্বীপ-বরিশালে;
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা-ভাগীরথী এ;
আমার গর্ভে জম্ম নেওয়া লঘিষ্ঠ এলিট শ্রেণী ছিল নিরব – দু’টানা,
তবে কৃষক ও লাঞ্ছিত-বঞ্ছিতরা;
ব্রিটিশ বিরোধী- অসহযোগ আন্দোলনে;
ছিল অবিরত আমায় করতে মুক্ত।
আমার অসংখ্যা সূর্য সন্তান করেছে তাদের জীবন দান,
ছিনিয়ে আনতে আমি মায়ের সম্মান।
আমি দীনবন্ধুর নীলদর্পন,
রবীন্দ্র নাথ, নজরুল- মধুসুদনের বৃটিশ বিরোধী –
জাগরণী জয়গান,
আমার লালিত স্বপ্ন ঘেরা হিরোডোটাসের উপখ্যান।
(৩)
১৯৪৭ এ; আমি দুঃখিনীর বুক ভরা লালিত স্বপ্নের উদ্যান,
উত্তর-পশ্চিমাদের চক্রান্তের ঝড়ে
ভেঙ্গে হলো খান খান।
পাকিস্তানী পেটোয়া – হায়েনাদের হাতে
আমার হলো বলিদান।
আমি লালচে – সবুজ শাড়ীতে টকবকে বাংলারূপসী,
পাকিস্তান-ভারত আমার সর্বগ্রাসী ।
নয়তো আমি-
নারী নামে পাকিস্থান-হিন্দুস্থানের দাসী।
লুন্ঠিত হয়েছিল আমার অধিকার,
এমন কি নিজ ভাষায় কথা বলার।
আমি বাংলা !বাংলা আমার অস্তিত্ত্ব ,
আমি আমার সর্বহারা বীর সন্তানদের-
স্বাধীন সর্বভৌমত্ত্ব।
(৪)
১৯৫২ এ আমার বীর সন্তান;
রফিক,শফিক,সালাম, বারাকাত জব্বাররে রক্তে –
আম্র ঘ্রাণের সবুজ শাড়ী’র লালচে রঙ্গ হলো টুকটুকে লাল।
১৭৫৭-১৯৪৭ এর শহীদের মিছিলে নাম লিখে,
১৯৫২ এর আমার শহীদ সূর্য সন্তান।
শহীদ-গাজী নওজোয়ান ;
বীর বেশে ছিনিয়ে এনেছিল,
আমার – অধিকার !
বাংলা ভাষায় কথা বলার।
(৫)
১৯৭১ এ আমার বীর – সূর্য সন্তান;
গর্জে উঠেছিল আমার লাল সবুজের অস্তিত্ত্বে- ১১ সেক্টরে!
টেকনাপ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাতুরীয়া।
কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা,
বিদ্রোহী কন্ঠে ছিল এক দফা,
আমি বাংলা মায়ের স্বাধীনতা।
শোষণে শোষণে জম্ম নেওয়া প্রতিবাদী- বিদ্রোহী ;
সময়ের সাহসী – আমার সূর্য সন্তান –
বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন, হাসনাত ও মনসুর আলী।
লাল – সবুজের বুকে ১১ সেক্টরে ;
আতাউল গণি উসমানী, আব্দুর রব, জিয়াউর রহমান,
খালেদ মোশারফ, রফিক, হায়দার, শফিউল্লাহ, নুরুজামান,
শওকত আলী, জলিল, জয়নাল, বশর, দত্ত, মন্জুর,
তাহের , হামিদুল্লাহ ও আবু উসমান।
দিবা রাতে অস্ত্র হাতে গেয়েছে বিজয়ের জয়গান।
ধ্বংশ করে ৪৭ এর পেটুয়াদের-
অস্ত্র, গোলাবারুদ, ট্রাক ও মিশিংগান ।
(৬)
১৭৫৭-১৯৫২ এর আমার বীর-সূর্য সন্তানদের রক্ত
– না শুকাতে,
লাল সবুজের পতাকা হাতে,
স্বাধীনতার মিছিল নিয়ে,
বুকের তাজা রক্তে লিখেছেন –
১৯৭১ এর শহীদের খাতায় নাম;
আমার জাহাঙ্গীর হামিদুর মোস্তাফা রুহুল,
নূর রউফ মতিউর সহ-
লক্ষ-লক্ষ বীর-বীরঙ্গনা সূর্য সন্তান।
সবুজের মাঝে অনন্ত কাল অবদি রক্তের হুলি খেলা,
আমার হারানোর যন্ত্রনা,
বুক ফাটা কান্না,
হারাতে – হারাতে আমি আজ সর্বহারা।
আমার বীর সূর্য সন্তান ; আমার শহীদ-গাজীরা,
বীর বেশে ছিনিয়ে এনেছে ,
আমার – সম্মান ।
আমি লাল সবুজে ; ১৭৫৭ এর শহীদ সিরাজদৌল্লাহর স্বাধীন বাংলা!
১৯৪৭ এর শহীদ তিতুমীর- দীনবন্ধু-মধুসুদনের স্বাধীন পূর্ব বাংলা !
১৯৫২ এর শহীদ রফিক-বারকাতদের স্বাধীন ভাষার স্বাধীন বাংলা!
আমি ১৯৭১ এর বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ-
মহিউদ্দীন-নূর মোহাম্মদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীন বাংলা!
আজ আমার কপালে স্বাধীনতার রাজ টীকা!
(৭)
অতপর ! আমি লাল – সবুজে স্বাধীন বাংলা।
কিন্তু- তিন বিঘা করিডোর,
চলনার ধ্রুব জাল যান-জট!
অবশেষে বন্ধুর ৭৪ এর চুক্তি-
২০১১ এ পেলাম করিডোর -চলাচলের মুক্তি।
আমার দামান সন্তান;
অস্ত্র ধরে,
যুদ্ধ করে,
বিশ্বের মানচিত্রে – খচিত করে বাংলা মায়ের নাম।
অতএব
হীনমন-চক্রান্তের বেড়া জালে ,
আরোরা বির্তকে
আমার স্বাধীনতা প্রশ্নবৃদ্ধ !
আবেগ শিকারীর শিকারে মর্মাহত ;
বিবেক চক্রান্তের বেড়াজালে- ধরাশায়ী,
নয়নের দৃষ্টি – ধুধু মরুভুমি;
১৭৫৭ এর চক্র- এখনো সক্রিয় !
অন্তসার শূণ্য – রক্তঝরা র্দীঘ ৯টি মাস,
মান ক্ষুন্ন আমার – আমার সন্তানদের।
শর্তের শক্তিতে লুট হয়,
২৭ কোটির সম ৭১ এর হাতিয়ার !
সংবাদটি প্রচারে দৈনিক অমৃত আনন্দ বাজার।
হায় !হায় !হায়!
চারিদিকে হাহাকার! পদ্মা আমার;
পানির ন্যায্য হিস্যার কূটকৌশলে-
অপ্রয়োজনে, বিনা কারণে ,
৭৫ থেকে-
কখনো জলধারা- মরভুমি সাহারা।
(৮)
সুল্ক; তরবারী নয়, রাইফেল নয়, নয়তো ট্রান্ক বা মেশিনগান,
মাহা চমৎকার এ অর্থ হাতিয়ার; হয় ব্যবহার,
আমি বাংলা- তলা ছাড়া ঝুড়ি,
কাল অবদি গেয়ে যেতে এই শ্লোগান।
হযরত শাহা জালাল-শাহা পরান,
সিলেটের মাটিকে করেন আলিঙ্গন,
যুগে যুগে , কালে কালে সিলেট আমার পূণ্যস্থান।
টিপাই বাধ ; সিলেটের ১৬ টি জেলা আজ মহা শশ্বান!
সীমান্ত দন্ধ, যার নেই অন্ত;
আবেগ-বিবেক আপ্লুত!
কাটা তারে ঝুলে
বুলেটে ঝাঝরা হওয়া ফেলানীর লাশ।
আমি আতংকিত ভয়ে,
সীমান্তে থাক করে রাখা বন্ধুক -মেশীন গান।