হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা

মহামারি করোনা ভাইরাসের পর ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। একদিকে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য যেমন এই স্যানিটাইজার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে অন্যদিকে, এর কারণেই বাড়ছে শিশুদের নানা সমস্যা। 

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) ‘আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠেছে এসেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কারণে শিশুদের চোখের এবং ত্বকের সমস্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাতে পারে। 

এ বিষয়ে শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে। এই মাত্রা অত্যন্ত কড়া। কোভিডের কারণে সকলেই বাধ্য হচ্ছি স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে। কিন্তু এটা মোটেই খুব স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষ করে, শিশুদের চোখ আর ত্বকের জন্য।’

গবেষণা বলছে, সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৯ সালে যত শিশুকে চোখে বিষক্রিয়ার কারণে চিকিৎসা করানো হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ১.৩ শতাংশের ক্ষেত্রেই বিষক্রিয়ার কারণ ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। শুধু চোখের নয়, বাড়ছে ত্বকের সমস্যাও।

এ বিষয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক পিয়ালি চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখনও পরিসংখ্যানগত প্রমাণ কিছু নেই। কিন্তু ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলের কারণে ত্বকের কিছু পরিবর্তন হবে, সেটা তো স্বাভাবিকই।’

শিশুদের ত্বকের ক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন দেখেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে পিয়ালি ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘শিশুদের তালুর ত্বক যতটা নরম হওয়ার কথা, তার থেকে কমেছে সেটা অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই দেখেছি। অনেক শিশুর আঙুলের ত্বকে ফাটল ধরছে। এটা সাধারণত সেই সব মানুষের ক্ষেত্রেই হয়, যারা সারা দিন প্রচুর মাজা-ধোওয়ার কাজ করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বিরল। অনেকের নখেও ফাটল ধরছে। এমনকি নখে ফাংগাসঘটিত সংক্রমণও হচ্ছে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময়ই শিশুরা নিজের খেয়ালে মুখে বা চোখে হাত দেয়। সেই সময় তাদের হাতে যদি স্যানিটাইজার লেগে থাকে, তা চোখে বা মুখে গেলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

অপূর্ব ঘোষ ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলছেন, অনেক শিশু ভুল করে স্যানিটাইজার খেয়ে ফেলেছে। এমন বহু ঘটনাই অহরহ ঘটছে। বলেন ‘ত্বকে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। তার মধ্যে অনেকগুলিই উপকারী। সেগুলো মারা গেলে, শরীরের ক্ষতি হয়। স্যানিটাইজার একসঙ্গে ভাল-মন্দ সব ব্যাকটেরিয়াকেই মেরে ফেলছে।’

এতদিন ধরে করোনা সংক্রমণ রুখতে স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু এরপর আস্তে আস্তে স্যানিটাইজারের ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে বলেও মত দেন চিকিৎসকরা। বাজারে যত স্যানিটাইজার পাওয়া যায়, তাদের গুণমানের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।

শিশুদের ক্ষেত্রে কী করা উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব ঘোষ ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গ্লাভসের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। তাতে শিশুদের হাতে স্যানিটাইজার লাগানোও কমবে। সংক্রমণের আশঙ্কাও কম থাকবে।’

ভারতে এখনও এমন কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার যে শিশুদের জন্য ক্ষতিকারকও হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত তারা।

আপনি আরও পড়তে পারেন